মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারের কথা আসলেই আমাদের চোখের সামনে চলে আসে দাড়ি-টুপি ওলা মানুষদের প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন গণমাধ্যম, নাটক, সিনেমা, গল্প, রাজনৈতিক দল, বই-পুস্তক হতে আমাদেরকে এই চিত্রের সাথেই পরিচয় করানো হয়েছে বার বার। যেন মুসলিমরাই একমাত্র রাজাকার ছিল, আর অন্য ধর্মের মানুষরা ধোয়া তুলসী পাতা। চলুন তাহলে কিছু অমুসলিম সদ্য মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশু মত নিষ্পাপ রাজাকারদের সাথে পরিচিত হয়ে আসি।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার রাজাকার বাহিনীর একটি দলিল-প্রমান ভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রকাশিত এই তালিকায় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নাম উল্লেখ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে থাকা দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।[1]১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ dw.com
বরিশালের বামপন্থী রাজনৈতিক দল বাসদের জনপ্রিয় নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা এড. তপন কুমার চক্রবর্তী এবং ঠাকুমা উষা রানি চক্রবর্তীর নাম ছিল সেই দালিলিক প্রমাণ যুক্ত রাজাকারের তালিকায়! সেখানে তপন কুমার ৬৫ নম্বর রাজাকার এবং উষা রানি ৪৫ নম্বর রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[2]মনীষা চক্রবর্তীর বাবা-ঠাকুমার নাম রাজাকারের তালিকায়! kalerkantho.com; রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: মনীষা চক্রবর্তী samakal.com
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ‘দালিলিক প্রমাণ’ যুক্ত এই রাজাকারের তালিকায় উল্লেখ থাকা তপন কুমার ও উষা রানি নাকি হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ও তপন কুমার ভাতাও পেতেন। অবশ্যই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ এমন অনেক মানুষ সরকারি উচ্চপদস্থ স্থানে রয়েছে যারা বাস্তবে প্রকৃত রাজাকার ছিল, এমন অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা ও ভাতা পাচ্ছে যারা ততকালিন সময়ে রাজাকার ছিল, যারা পূর্বপাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করতো। বর্তমানে এমন অনেকের নাম পাওয়া যায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যারা কখনো যুদ্ধ তো দূরের কথা অস্ত্রও হাতে নেয় নি, অনেকেতো আবার জন্মও হয় নি তখন। আবার আমাদের দেশে এমন বহু রাজাকারও রয়েছে যাদের ৭১ এর আগে জন্মই হয় নি। তাই তপন কুমারের এক সাথে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া ও রাজাকার হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না, কারণ এই দেশে ৩৩ হাজারেরও বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিল বা আছে।[3]ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ২৫ হাজার ৫০০ prothomalo.com
যদিও মনীষা চক্রবর্তীর দাবি ছিল রাজাকারের তালিকায় তাদের নাম এসব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। শাহাবাগীদের অনেক হৈচৈর পরে এই তালিকাটি পরবর্তীতে বাতিল করা হয়, কারণ হয়ত কেউ কল্পনাও করতে পারেনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক রাজাকার হতে পারে! হয়ত তারা হিন্দু না হয়ে মুসলিম হলে তাদেরকে বলা হত, “আমাদের কাছে দলিল প্রমাণ রয়েছে।” কিন্তু তারা হিন্দু ছিল বিধায় তাদেরকে এই কথাটি বলার প্রয়োজন বোধ করেনি হয়ত কেউ। প্রশ্ন থেকেই যায়, ‘একজন হিন্দুর পক্ষে রাজাকার হওয়া কি অসম্ভব?’
সেই তালিকাতেই বরিশালের ২৬ জন হিন্দু সম্প্রদায় হতে রাজাকারের নাম উঠে এসেছিল সবার সামনে। তারা হল – পিয়ারি লাল গাইন (সিরিয়াল-১০২), মন্টু চন্দ্র দাস (সিরিয়াল- ৯৯), জীতেন্দ্র নাথ দত্ত (সিরিয়াল- ৯৫), মিহির লাল দত্ত (সিরিয়াল-৯৪), দেবেন্দ্র বিজয় মুখার্জী (সিরিয়াল-৮৭), জগদীশ চন্দ্র মুখার্জী (সিরিয়াল-৮৩), হরিপদ দে (সিরিয়াল-৮১), অমৃত লাল ঘোষ (সিরিয়াল-৭৬), নরেন্দ্র নাথ মজুমদার (সিরিয়াল-৮০), শিশির কুমার মুখার্জী (সিরিয়াল-৬১), তপন কুমার চক্রবর্তী (সিরিয়াল-৬৩), ডিএন মণ্ডল (সিরিয়াল-৬৫), কালীপদ ব্যানার্জী (সিরিয়াল-৫৩), ঊষা রানী চক্রবর্তী (সিরিয়াল-৪৫), রানা ঘোষ (সিরিয়াল-৩৮), কনক প্রভা মজুমদার (সিরিয়াল-৩৭), বিজয়া বালা দাস (৩৫), মধু সূদন মিস্ত্রি (সিরিয়াল-৩৪), অরুণ মিস্ত্রি (সিরিয়াল-২৪), বিমল কৃষ্ণ পাল (সিরিয়াল-২৬), আভা রাণী দাস (সিরিয়াল-২৭), উপেন্দ্র নাথ বসু (সিরিয়াল-২৮), পারুল বালা কর্মকার (সিরিয়াল-৩৩), রাধান্তা দাস (সিরিয়াল-১১), হরে কৃষ্ণ পাল (সিরিয়াল-১০), সুকুমার চন্দ্র সাহা (সিরিয়াল-০৯)।[4]বরিশালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৬ রাজাকার! jugantor.com এদের মধ্যে মিহির লাল দত্ত ভাষা সৈনিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, তপন কুমার চক্রবর্তী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তার মা ঊষা রানী চক্রবর্তীকে নিয়ে মূলত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া আরেকটি নিউজে ৪৩ জন হিন্দু রাজাকারের কথা বলা হয়েছে।[5]‘শান্তি কমিটির সদস্য হলেই রাজাকার হয়ে যায় না’ dhakatimes24.com
১৯৭১ সাথে যে বরিশালে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকার ছিল তার প্রমাণ তৎকালীন পত্রিকাতেই পাওয়া যায়। ১৯৭১, ৩১ জুলাই, দৈনিক আজাদে ‘বরিশালে জনসভা ও মিছিল, ভারত পূর্ব্ব পাকিস্তানের বন্ধু হইতে পারে না’ এই শিরোনামে একটি নিউজ করা হয়, যেখানে লিখা ছিল বরিশালের শান্তি কমিটির উদ্যোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে মিছিল করেছে। সেই মিছিলে অমুসলিমদের মাঝে সবচেয়ে বড় যে নামগুলো ছিল তা হল, বরিশাল ল কলেজের অধ্যক্ষ মিঃ উপেন্দ্র নাথ চাটার্জী, প্রখ্যাত আইনজীবী মিঃ জেতেন্দ্র নাথ দত্ত।[6]https://drive.google.com/file/d/1tE9GxrVCGRgI7PG3dD97NEEYM9BOXabr/view
এমনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বরিশাল জেলা শান্তি কমিটির ৩২ সদস্যদের মধ্যে চারজন সহ-সভাপতি পদের একজন ছিলেন বরিশাল নগরীর হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট প্রমথ কুমার সেন, তিনি পরবর্তীতে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যে তখন শুধু দেশীয় রাজাকারগণই ছিলেন বিষয়টা কিন্তু একদমই তেমন না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বহু শর্ত ও চুক্তির মাধ্যমে প্রায় সকল বিষয়ের উপর নিজেদের কতৃত্ব আদায় করে নেয়। চুক্তি এমন ছিল যে যা পূর্বপাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ও মানুষদের জন্য গোলামি, চরম অপমানকর, মর্যাদাহীন ও অসম্মানজনক ছিল।[7]দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা ৩২৫; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ, পৃষ্ঠা ৮০; জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫, পৃষ্ঠা ৪৩৩-৩৪, ৪র্থ সংস্করণ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ‘RAW’ তাদের তৈরি করা বিশেষ বাহিনি দ্বারা তাদের বিরোধীতা করা পূর্ব পাকিস্তানি মুক্তিযোদ্ধা, অফিসার, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গদেরকে হত্যা করতে থাকে, কোথাও গুপ্ত ভাবে আবার কোথাও শুধু হয় সরাসরি লড়াই।[8]বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬; লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা ২২৭-২৩০ এই ভারতীয় মিত্রবাহিনী রাজাকারদের লুঠতরাজ, লুটপাট, হত্যা, গোলামি-দাসত্বের চুক্তিগুলোর বিরোধীতা করায় বাংলাদেশের প্রথম আসামি হন আমাদেরই সেক্টর কমান্ডার মেজর এম. এ. জলিল। একই কারনে চাকরিচ্যুত হন আমাদের আরেক আর্মি আফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।[9]অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, পৃষ্টা ৬৬-৬৭; India’s Hegemonic Design in Bangladesh, p 84; মেজর জলিলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জবানবন্দী dailysangram; Bangladesh: An Enslaved Nation? (Part I) southasiajournal.net; Abu Taher’s Last Testament: Bangladesh: The … See Full Note
শুদ্ধানন্দ মহাথের, অং শৈ প্রু চৌধুরি, ত্রিদিব রায়ের মতো এত পরিচিত বৌদ্ধ মানুষরাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এমনকি ত্রিদিব রায়ত ১৯৭০ এর দশকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানেই চলে যান ও সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। অং শৈ প্রু চৌধুরীও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। ত্রিদিব রায় ও অং শৈ প্রু চৌধুরি ছিল রাজা, তারা তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে মিলে যে জুলুম করেছিল তা আরো জানতে গেলে গা-শিউরে উঠে। আরেক দিকে শুদ্ধানন্দ মহাশয়ের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বক্তব্যগুলো এখন আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না তেমন, সব জায়গায় থেকে কৌশলে সেগুলোকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবেই মুছে ফেলা হয়েছে আরো অসংখ্য অমুসলিম রাজাকারদের নাম ও তাদের কীর্তিকলাপ।[10] ত্রিদিব রায় ; অহিংসা ছাড়া শান্তির পথ নেই: শুদ্ধানন্দ মহাথের ; অং শৈ প্রু চৌধুরী ; ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ পিনাকী ভট্টাচার্য
এছাড়া উপজাতিদের মধ্যে অনেক অনেক রাজাকার ছিল, বিশেষ করে চাকমারা অনেক বেশি পশ্চিম পাকিস্তানিদের হয়ে কাজ করেছে। কোন কোন উপজাতি তাদেরকে অস্ত্র, চিকিৎসা, আশ্রয় ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করেছে, কোন কোন উপজাতি তাদের সাথে দাঁড়িয়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, কোন কোন উপজাতি পাকিস্তানিদেরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।[11] উপজাতি রাজাকাররা কি ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে? bdnews24.com; রাজাকার ত্রিদিব রায়ই নয়, আছেন মং প্রু সেইনের মতো অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাও channelionline.com
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-
“মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত ছিল। সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর (ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী) ব্যক্তিগত স্টাফদের সঙ্গে আমার হৃদিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রধানমন্ত্রীর এক ব্যক্তিগত স্টাফ আমাকে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ জানায় যে, আগের দিন অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে তিনজন সংখ্যালঘু নেতা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে। তারা ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে ভারতের অংশ করে রাখার প্রস্তাব রাখে। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবের জবাবে বলে: ‘ইয়ে না মুমকীন হ্যায়’। (এ সম্ভব নয়)[12]সাংবাদিক মাসুদুল হক তার বহুল আলোচিত গ্রন্থ “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ” গ্রন্থের ১৪০-১৪৩ পৃষ্ঠাতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর এই … See Full Note
চিত্তরঞ্জন সুতার ছিল বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য। ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সুতার ও কালিদাস বৈদ্য ইন্দিরা গান্ধির কাছে গিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করে নিতে চাপ দেন। তাদের বক্তব্য ছিল দ্বি-জাতিতত্ব যদি নাই থাকে সীমানা থাকবে কেন? কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন হয় নি। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে হিন্দু রাজ্যে পরিণত করার জন্য “স্বাধীন বঙ্গভূমি” নামে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এই আন্দোলনে তার নাম হচ্ছে পার্থ সামন্ত।[13]চিত্তরঞ্জন সুতার, wikipedia কালিদাস বৈদ্যও এই আন্দোলনের এক অন্যতম নেতা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর তাদের মিশন পুরন না হওয়ার পর সে ভারতে চলে যায়, এবং সেখানে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে “বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব” নামের একটি বই লিখে।
অনেকেই বলতে পারে, যুদ্ধেতো বহু হিন্দুও অংশগ্রহন করেছিল ও পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। অবশ্যই কথাটা মিথ্যা নয়, কিন্তু এও হতে পারে যে হিন্দুগুলো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো তারা বাংলাদেশ ভারতের হবে এইরকম কিছু বাস্তবায়ন হবে চিন্তা করেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। না হয় বেশির ভাগ হিন্দুইতো দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জনে এসে দাঁড়ায়। শরণার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল হিন্দু। আগস্ট ১৯৭১ পর্যন্ত হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ৭১ হাজার এবং মুসলিম ও অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ।’[14]অধিকাংশই ছিল হিন্দু, samakal.com দেখাই যাচ্ছে, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের যুদ্ধ করার তুলনায় ভারত পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ছিলো বেশি। আমরা এটা বলছি না যে সব হিন্দুই এই মনোভাব বা আশা নিয়ে যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের অধিকাংশ হয়তো এমন মনোভাব নিয়ে যুদ্ধ করে থাকতে পারে, এটা সত্য হওয়ার পিছনে বহু কারন ও দলিল-প্রমান রয়েছে, সেগুলো নিয়ে না হয় অন্য কোন সময় আলোচনা করা যাবে।
৭১ এর যুদ্ধে রাজাকার শুধুই মুসলিমরা ছিল এই ধরনের চিন্তা ও দাবি নিছক রূপ কথার গল্প ছাড়া যে আর কিছুই নয় তাতো এই আলোচনায় প্রমানিত হয়ে গেল। তাহলে প্রশ্ন আসে যে কেন বাঙালিরা এখনো এই কাল্পনিক গল্পে বিশ্বাস করছে, কেন এই কাল্পনিক গল্পকে সাধারন মানুষকে গিলানোর চেষ্টা করছে!
- লিখেছেনঃ– Ashraful Nafiz
Footnotes
⇧1 | ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ dw.com |
---|---|
⇧2 | মনীষা চক্রবর্তীর বাবা-ঠাকুমার নাম রাজাকারের তালিকায়! kalerkantho.com; রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: মনীষা চক্রবর্তী samakal.com |
⇧3 | ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ২৫ হাজার ৫০০ prothomalo.com |
⇧4 | বরিশালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৬ রাজাকার! jugantor.com |
⇧5 | ‘শান্তি কমিটির সদস্য হলেই রাজাকার হয়ে যায় না’ dhakatimes24.com |
⇧6 | https://drive.google.com/file/d/1tE9GxrVCGRgI7PG3dD97NEEYM9BOXabr/view |
⇧7 | দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা ৩২৫; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ, পৃষ্ঠা ৮০; জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫, পৃষ্ঠা ৪৩৩-৩৪, ৪র্থ সংস্করণ |
⇧8 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬; লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা ২২৭-২৩০ |
⇧9 | অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, পৃষ্টা ৬৬-৬৭; India’s Hegemonic Design in Bangladesh, p 84; মেজর জলিলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জবানবন্দী dailysangram; Bangladesh: An Enslaved Nation? (Part I) southasiajournal.net; Abu Taher’s Last Testament: Bangladesh: The Unfinished Revolution jstor.org |
⇧10 | ত্রিদিব রায় ; অহিংসা ছাড়া শান্তির পথ নেই: শুদ্ধানন্দ মহাথের ; অং শৈ প্রু চৌধুরী ; ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ পিনাকী ভট্টাচার্য |
⇧11 | উপজাতি রাজাকাররা কি ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে? bdnews24.com; রাজাকার ত্রিদিব রায়ই নয়, আছেন মং প্রু সেইনের মতো অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাও channelionline.com |
⇧12 | সাংবাদিক মাসুদুল হক তার বহুল আলোচিত গ্রন্থ “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ” গ্রন্থের ১৪০-১৪৩ পৃষ্ঠাতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর এই সাক্ষাৎকারটি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। |
⇧13 | চিত্তরঞ্জন সুতার, wikipedia |
⇧14 | অধিকাংশই ছিল হিন্দু, samakal.com |