ভারতের ইতিহাসে মসজিদ ধ্বংস – একটা অচর্চিত বিষয়
আমরা ইতিহাস চর্চায় বা পাঠে এতদিন কেবল মুসলিম বাদশাহদের হাতে মন্দির ধ্বংসই কেবল শুনে এসেছি। কিন্তু এর উল্টোটা কী কখনো শুনেছি বা পড়েছি? উত্তর হলোঃ না। এসব তথ্যগুলো মূলধারায় কখনো আসতে দেওয়া হয়না, এজন্যই এগুলো নিয়ে খুব একটা চর্চা হয়না।
আজকে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।
হিন্দুরাজারা মধ্যযুগে যে সুযোগ পেলেই মসজিদ ধ্বংস করতেন, তাতে আজ লুকোছাপার ব্যাপার সেরকম নেই, বহু গবেষক এবিষয়ে লেখালেখি করেছেন। ঔরঙ্গজেবের সময়ে (১৬৫৮-১৭০৭) রাজপুত রাজা ভীম সিংহ আমেদাবাদের বিখ্যাত মসজিদ সহ মোট ৩০০ মসজিদ ধ্বংস করেছিলেন।[1]রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত, দ্য মুঘল এস্পায়ার, ভারতীয় বিদ্যাভবন, ১৯৭৪, পৃ. ৫১
পরে এই ভীমসিংহ আবার মারাঠাদের বিরুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি হয়েছিলেন। চিতোরে রাণা কুম্ভের একটি শিলালেখ রয়েছে, যেখানে উৎকীর্ণ আছে যে, রাণা গুজরাটে ফিরোজ শাহের মসজিদ ভেঙেছিলে।[2]অতীশ দাশগুপ্ত, বাংলার ধর্মীয় সংস্কৃতির জননী : সম্প্রীতি, যুবশক্তি প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ৯২
আজিজ আহমদের গ্রন্থ হতে জানা যায়, মহীপাল লাহোর বিজয়কালে বহু মুসলমান হত্যা করেন ও বহু মসজিদ ভেঙে মন্দির করেন। রাণা সঙ্গের সামন্ত রায় সেনের আদেশে চান্দোরি, সারাংপুর, রণথম্ভোরে মসজিদ ভেঙে সেখানে আস্তাবল তৈরি করা হয়।[3]আজিজ আহমদ, স্টাডিজ ইন ইসলামিক কালচার ইন দ্য ইন্ডিয়ান এনভায়রনমেন্ট, অক্সফোর্ড, ১৯৬৪
১৮ শতকে শিখ ও জাঠেরাও এ ধরনের কাজ করেছিল। যদুনাথ সরকার লিখেছেন,
‘বদন সিংহের নেতৃত্বে জাঠেরা আগ্রায় অভিযান চালিয়ে বাড়ি ঘর, বাগান ও মসজিদ ভেঙেছে।’
১৮০৯ সালে হিন্দুরা প্রায় ৫০টি মসজিদ ধ্বংস করে কাশীতে।[4]জেলা গেজেটিয়ার বেনারস, ১৮০৯, পৃ. ২০৭-৮ এই প্রসঙ্গে বঙ্গের হিন্দু রাজা গণেশের উল্লেখ না করলে তো লেখাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
শ্রী সুখময় মুখোপাধ্যায় গণেশ সম্পর্কে লিখেছেনঃ
- ‘সিংহাসনে বসার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশদের সাথে তাঁর বিরোধ বেঁধে ওঠে। গণেশ তখন বহু দরবেশকে হত্যা করেন।
পান্ডুয়ার অন্যান্য দরবেশ এবং উলেমাকে তার আদেশে জলে ডুবিয়ে বধ করা হয়’। - সঙ্গীত শিরোমণিতে রাজ্য গণেশকে আগুনের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে: ‘এই আগুনে মুসলমানেরা পতঙ্গের মত পুড়ে মরেছিল’।
- শ্রী গণেশ রাজার অত্যাচার সম্বন্ধে পান্ডুয়া অঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। প্রবাদটি এই যে, ‘রাজা গণেশ ক্ষমতা লাভের পরে আদিনা মসজিদকে তার কাছারী বাড়ীতে পরিণত করেছিলেন।…. এই প্রবাদ সত্য হওয়া অসম্ভব নয়’।[5]বাংলার ইতিহাসের দুশো বছর স্বাধীন সুলতানদের আমল (১৩৩৮-১৫৩৮), দ্বিতীয় খন্ড , সুখময় মুখোপাধ্যায়, পৃ ৫৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.303612/page/n91/mode/1up
এ সম্বন্ধে এইচ এস স্টেপলটন লিখেছিলেন,
‘It may also be added with reference to the supposed connection of Raja Kans with Eklakhi building that local tradition states that when the Raja objained supreme power over Bengal after the death of the short lived successors of Ghiasuddin, out of contempt of Muhammadanism he used the adjacent adina mosque as his Kacheri (Magistrate’s Court or Zomindari Office).’[6]Memoirs of Gaur and Pandua, p. 126
এই তো কিছুদিন আগে গুজরাট দাঙ্গায় ধ্বংস করা হয়েছে ৫০০ মসজিদ।[7]মিল্লি গ্যাজেট, ২ এপ্রিল, ২০০২
Footnotes
⇧1 | রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত, দ্য মুঘল এস্পায়ার, ভারতীয় বিদ্যাভবন, ১৯৭৪, পৃ. ৫১ |
---|---|
⇧2 | অতীশ দাশগুপ্ত, বাংলার ধর্মীয় সংস্কৃতির জননী : সম্প্রীতি, যুবশক্তি প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ৯২ |
⇧3 | আজিজ আহমদ, স্টাডিজ ইন ইসলামিক কালচার ইন দ্য ইন্ডিয়ান এনভায়রনমেন্ট, অক্সফোর্ড, ১৯৬৪ |
⇧4 | জেলা গেজেটিয়ার বেনারস, ১৮০৯, পৃ. ২০৭-৮ |
⇧5 | বাংলার ইতিহাসের দুশো বছর স্বাধীন সুলতানদের আমল (১৩৩৮-১৫৩৮), দ্বিতীয় খন্ড , সুখময় মুখোপাধ্যায়, পৃ ৫৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.303612/page/n91/mode/1up |
⇧6 | Memoirs of Gaur and Pandua, p. 126 |
⇧7 | মিল্লি গ্যাজেট, ২ এপ্রিল, ২০০২ |