বেদ ও নাস্তিক থিওরি
ভূমিকা
‘নাস্তিক’ টার্মটার সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। সাধারণত যারা “আল্লাহ নেই” কথাটায় বিশ্বাসী তাদেরকেই নাস্তিক বলা হয়। তবে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী নাস্তিকের সংজ্ঞা আলাদা। আজ এ লেখার মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করবো সনাতন ধর্মে মানুষ কী কী ভাবে নাস্তিক হয় ও সে সকল নাস্তিকদের প্রতি ব্রাহ্মণদের আচরণ কীরকম। আর আমরা আমাদের লেখাতে যথেষ্ট পরিমান রেফারেন্স ব্যবহার করবো, বেদের অনুবাদের ক্ষেত্রে আর্যসমাজের ভাষ্য থেকে রেফারেন্স ব্যবহার করবো।
যারা বৈদিক ঈশ্বরের উপাসনা করে না বা তাকে মানে না তারা ‘নাস্তিক’?
সনাতন ধর্মে মানুষ যে ভাবে নাস্তিক হয় তাহলো বৈদিক ঈশ্বরের উপাসনা না করার মাধ্যমে। মানে কেউ যদি বৈদিক ঈশ্বরের উপাসনা না করে তবে সে শাস্ত্র অনুযায়ী একজন নাস্তিক।
সামবেদে আছে,
যাহারা স্ততি প্রাথনা উপাসনাদি করে না এমন সাপের ফনা সদৃশ বিষাক্ত বৃত্তির সঞ্চারকারী পাপী নাস্তিক।[1]সামবেদঃ ১৩৪৩, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী
বেদ-মীমাংসায় আছে,
ইন্দ্র কে না মানাই নাস্তিক্যের লক্ষণ।[2]বেদ-মীমাংসা: ৩.৫.১.১৪৯
উল্লেখ্য যে হিন্দুধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ইন্দ্র হলো বৈদিক ঈশ্বর ও পরমাত্মা।[3]ঋগ্বেদঃ ১.১৬৪.৪৬[4]কৈবল্য উপনিষদঃ ৩ যা হোক, বেদ-মীমাংসায় আরো আছে,
যাহারা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী তারা নাস্তিক ও তারাই বেদের মানুষ অদেব।[5]বেদ-মীমাংসা: ৩.৫.১.১৪৮
অর্থাৎ, যারা বৈদিক ঈশ্বর কে মানে না ও তার উপাসনা করে না তারা নাস্তিক। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী সকল অহিন্দুই নাস্তিক, মুসলিমরাও নাস্তিক। কারণ এই কাল্পনিক বৈদিক ঈশ্বরের ইবাদত আমরা করি না। বৈদিক ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে আমরা পরে আরেকদিন আলোচনা করবো।
বৈদিক ঈশ্বর নিন্দাকারী নাস্তিক
বেদ অনুযায়ী যারা বৈদিক ঈশ্বরের নিন্দাকারী বা যারা বৈদিক ঈশ্বরের নিন্দা করে তারাও নাস্তিক।
যাহারা ব্রহ্মবিদ্বেষ (ঈশ্বরের নিন্দাকারী) কাম,ক্রোধ,নাস্তিকতা ইত্যাদি ইত্যাদি মানসিক শত্রু।[6]সামবেদঃ ১৯৫, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী
যাহারা (ব্রহ্মবিদ্বেষ) সর্বশক্তির অমান্যকারী নাস্তিক।[7]সামবেদঃ ১৩৫৪, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী
তো দেখুন স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য সরাসরি দেখা যাচ্ছে যারা ঈশ্বরের নিন্দা করে বা অবমাননা করে তারা সুস্পষ্ট ভাবে নাস্তিক। আর কি লাগে!
বেদ নিন্দাকারী নাস্তিক?
এ পয়েন্ট টা অনেক চমৎকার। কারন এ পয়েন্টের উপর এতো এতো রেফারেন্স আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। এ বিষয় টা বার বার শাস্ত্রে এসেছে যে যাহারা বেদ নিন্দা করে তাহারা সুস্পষ্ট ভাবে নাস্তিক। তো আসুন আমরা কিছু রেফারেন্স দেখে নেই।
নাস্তিক বেদজ্ঞানাদির নিন্দুক।[8]সামবেদঃ ১৩৫৪, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী
সেই ব্যক্তি বেদের নিন্দাকারী, অতএব নাস্তিক।[9]মনু-সংহিতাঃ ২.১১, ভাষ্যকারঃ মেধাতিথী
যে ব্যক্তি বেদের নিন্দা করে, বেদ ত্যাগ করে ও বেদ বিরোধী আচরণ করে তাহাকে নাস্তিক বলে।[10]সত্যার্থ প্রকাশঃ ১১.২৮৪, লেখকঃ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
আমরা উপরের তিন পয়েন্ট এনে প্রমাণ করে দিয়েছি যে যাহারা বেদ নিন্দা করে তাহারা নাস্তিক।
যারা যজ্ঞ করে না তারা নাস্তিক?
এ পয়েন্টে বলা হয়েছে যাহারা যজ্ঞ করে না তাহারা নাস্তিক। মানে সকলের উচিত সনাতন ধর্ম অনুযায়ী বৈদিক যজ্ঞ করা আর এ যজ্ঞ যারা না করবে তাহলে তারাই নাস্তিক। আসুন আমরা এ সম্পর্কে রেফারেন্স দেখে নেই।
- যাস্ক উক্ত বিষয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছে ঋগ্বেদ ৩.৫৩.১৪ সম্পর্কে। যে যারা যজ্ঞ করে না তারা নাস্তিক। নিরুক্তের একাধিক জায়গায় এ বিষয়টির উল্লেখ পাবেন।[11]নিরুক্তঃ ৬.৩২.১[12]নিরুক্তঃ ৬.৩২.২[13]নিরুক্তঃ ৬.৩২.৩
- বেদ মীমাংসায় আছে,
যাহারা যজ্ঞ করে না তারাই নাস্তিক।[14]বেদ-মীমাংসাঃ ৩.৫.১.১৪৮
- স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীও বলেছে নাস্তিকতা যজ্ঞাদি উত্তম কর্ম্ম সমূহ স্বীকার করিতেন না।[15]সত্যার্থ প্রকাশঃ ১২.৩৭১
মূর্তিপূজাকারী নাস্তিক?
নাস্তিক হওয়ার এ নীতি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রদান করেছে। দয়ানন্দ সরস্বতীর দৃষ্টিতে কেউ প্রতিমা / মূর্তিপূজা করলো মানে সে নাস্তিক। মানে কোনো সনাতনী/হিন্দুরা যদি নিজেকে হিন্দু দাবি করার পরেও প্রতিমা বা মূর্তিপূজা করে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর চোখে সে সরাসরি নাস্তিক।[16]সত্যার্থ প্রকাশঃ ১১.২৮৪
যারা বেদের উপদেশ গ্রহন করে না তারা নাস্তিক?
এই নীতিটাও আর্যসমাজের প্রতিষ্টাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রদান করেছে। আর এ নীতি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সকল অনুসারীরাই অনুসরণ করে থাকে যে কাউকে বার বার বেদের কোনো বিষয় উপদেশ করার পরেও সে যদি না বুঝতে চায় তাহলে সে নাস্তিক।
[বৈদিক] পরমেশ্বরের কথা অবশ্যই মানিতে হইবে। এত কথার পরেও যদি কেহ না মানে তবে তাকে নাস্তিক বলিতে হইবে।[17]সত্যার্থ প্রকাশঃ ৩.৬১
নাস্তিকদের শাস্তি?
আমরা দেখতে পারলাম যে প্রচলিত নাস্তিকসহ সকল অহিন্দুরাই হিন্দুধর্মের মতে নাস্তিক। যাই হোক, ভারতীয় হিন্দুদের বেতনভুক্ত নাস্তিকরা বলে থাকে হিন্দুধর্মে নাস্তিকদের অধিকার আছে। আসুন শুধু বেদের আলোকেই দেখি কেমন অধিকার! হিন্দুদের অন্যান্য কিতাবে তো আরো ভয়ংকর ভয়ংকর কাজ করতে বলা হয়েছে অহিন্দুদের সাথে।
বেদ অনুযায়ী
সামবেদে আছে,
নাস্তিকদের ব্রহ্মাণ্ড থেকে বিনাশ করতে হবে।[18]সামবেদঃ ১৩৫৪
নাস্তিকদের পা দিয়ে পাড়িয়ে বিনাশ করতে হবে।[19]সামবেদঃ ১৩৪৩
নাস্তিকদের ইচ্ছা মতো বিনাশ করতে হবে।[20]সামবেদঃ ১৯৫
নিরুক্ত অনুযায়ী
নিরুক্তে আছে,
- নাস্তিকদের গাভী ও ধন-সম্পদ যাস্ক ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে।[21]নিরুক্তঃ ৬.৩২.১
- নাস্তিকদের ধর্ম্মাধর্ম্ম বোধ নাই।[22]নিরুক্তঃ ৬.৩২.৩
- নাস্তিকরা দেবপিতৃকার্য্যে অনভিজ্ঞ।
- নাস্তিকরা দানাদি দ্বারা মানুষের উপকারেও অনভ্যস্ত।
- কাজেই নাস্তিকদের কেন জন্ম হইয়াছে।
- নাস্তিকরা না জন্মিলেই ভালো ছিলো।
আশা করি আজ সংক্ষিপ্ত ভাবে রেফারেন্স ভিত্তিক যতটুকু লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরলাম এতটুকুই ঐ সকল গলাবাজ হিন্দুদের জন্য যথেষ্ট।
তো আজ এ পর্যন্তই রাখলাম। আশা করি সবাই ভালো থাকবেন।
Footnotes
⇧1 | সামবেদঃ ১৩৪৩, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী |
---|---|
⇧2 | বেদ-মীমাংসা: ৩.৫.১.১৪৯ |
⇧3 | ঋগ্বেদঃ ১.১৬৪.৪৬ |
⇧4 | কৈবল্য উপনিষদঃ ৩ |
⇧5 | বেদ-মীমাংসা: ৩.৫.১.১৪৮ |
⇧6 | সামবেদঃ ১৯৫, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী |
⇧7, ⇧8 | সামবেদঃ ১৩৫৪, ভাষ্যকারঃ স্বামী চেতনানন্দ সরস্বতী |
⇧9 | মনু-সংহিতাঃ ২.১১, ভাষ্যকারঃ মেধাতিথী |
⇧10 | সত্যার্থ প্রকাশঃ ১১.২৮৪, লেখকঃ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী |
⇧11, ⇧21 | নিরুক্তঃ ৬.৩২.১ |
⇧12 | নিরুক্তঃ ৬.৩২.২ |
⇧13, ⇧22 | নিরুক্তঃ ৬.৩২.৩ |
⇧14 | বেদ-মীমাংসাঃ ৩.৫.১.১৪৮ |
⇧15 | সত্যার্থ প্রকাশঃ ১২.৩৭১ |
⇧16 | সত্যার্থ প্রকাশঃ ১১.২৮৪ |
⇧17 | সত্যার্থ প্রকাশঃ ৩.৬১ |
⇧18 | সামবেদঃ ১৩৫৪ |
⇧19 | সামবেদঃ ১৩৪৩ |
⇧20 | সামবেদঃ ১৯৫ |