হিন্দুধর্ম

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

বেদ হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ। যার রচনা উৎপত্তি সম্পর্কে বেশিরভাগ হিন্দু একদিকে গেলেও, কিছু কিছু হিন্দু বলে থাকে বেদ ঈশ্বরপ্রদত্ত, সৃষ্টির প্রথম থেকেই আছে, কোনো মানুষ লিখে নি।আমরা জানি বেদ মূলত আর্য ঋষিদের লেখা, এদেশে বহিরাগত আর্যদের অবস্থা, অনার্যদের সাথে যুদ্ধ-সংঘাত এসব নিয়েই গল্পগাঁথা হলো বেদ। বেদকে হিন্দুরা সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকে।

তবে আজকে আমরা প্রকৃত ইতিহাসের দিকে না যাই। বরং আজকে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ কী বলে সেটাই দেখি।

হিন্দু মিথোলজির পরস্পরবিরোধী বর্ণনা

হিন্দু মিথোলজিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বেদ মূলত ব্রহ্মার সৃষ্টি। তবে আমরা এখানে একাধিক দিক দেখাচ্ছি।

প্রজাপতি দেবতার তপস্যার ফলে তিন দেবতা থেকে

ছান্দোগ্য উপনিষদে দেখা যায়,[1]ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৪র্থ প্রপাটক, খন্ড ১৭, শ্লোক ১-২, বসুমতী সাহিত্য মন্দির, পৃ ৩৫৪

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

প্রজাপতির্লোকানভ্যতপৎ, তেষাং তপ্যমানানা* রসান্ প্রাবৃহৎ, অগ্নিং পৃথিব্যাঃ, বায়ুমন্তরিক্ষাৎ, আদিত্যং দিবঃ ॥ ১॥

প্রজাপতি লোকসমূহের উদ্দেশ্যে তপস্যা করিয়াছিলেন, এবং তপ্যমান সেই লোকসমূহের রস অর্থাৎ সার উদ্ধার করিয়াছিলেন; পৃথিবী হইতে অগ্নি, অন্তরিক্ষ হইতে বায়ু ও দ্যুলোক হইতে আদিত্যকে অর্থাৎ পৃথিবী, অন্তরিক্ষ ও দ্যুলোক এই তিন লোক হইতে অগ্নি, বায়ু ও সূর্য্যরূপ তিনটি সার পদার্থ উদ্ধার করিয়াছিলেন।

স এতাস্তিস্রো দেবতা অভ্যতপৎ, তাসাং তপ্যমানানা* রসান্ প্রাবৃহৎ, অগ্নেঋর্চঃ, বায়োর্যজূ*ষি, সামান্যাদিত্যাৎ ॥ ২॥

সেই প্রজাপতি এই তিন দেবতাকে অর্থাৎ তাঁহাদের উদ্দেশে তপস্যা করিয়াছিলেন ও তপ্যমান সেই তিন দেবতার রস অর্থাৎ সার গ্রহণ করিয়াছিলেন, অগ্নি হইতে ঋগবেদ, বায়ু হইতে যজুর্ব্বেদ ও আদিত্য হইতে সামবেদকে উদ্ধৃত করিয়াছিলেন।

শতপথ ব্রাহ্মণেও সমতুল্য কথা দেখা যায়,[2]শতপথ ব্রাহ্মণ ১১/৫/৮/১-৩, Satapatha Brahmana Part V (SBE44), Julius Eggeling tr. [1900], page 102-103 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.37912/page/n152/mode/1up

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

1. Verily, in the beginning, Pragâpati alone was here. He desired, ‘May I exist, may I be generated.’ He wearied himself and performed fervid devotions: from him, thus wearied and heated, the three worlds were created–the earth, the air, and the sky.

প্রকৃতপক্ষে শুরুতে, প্রজাপতি (ব্রহ্মা) একাই ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ‘আমার অস্তিত্ব আসুক, আমি যেন উৎপন্ন হই।’ তিনি নিজেকে পরিশ্রান্ত করেছিলেন এবং প্রচণ্ড তপস্যা করেছিলেন: তাঁর থেকে, এইভাবে ক্লান্ত এবং উত্তপ্ত হয়ে তিনটি জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল – পৃথিবী, বায়ু এবং আকাশ।

2. He heated these three worlds, and from them, thus heated, three lights (gyotis) were produced–Agni (the fire), he who blows here (Vâyu), and Sûrya (the sun).

তিনি এই তিনটি জগতকে উত্তপ্ত করেছিলেন, এবং তাদের থেকে, এইভাবে উত্তপ্ত, তিনটি আলো (জ্যোতিস) উৎপন্ন হয়েছিল – অগ্নি (আগুন), যিনি এখানে প্রবাহিত হোন (বায়ু), এবং সূর্য্য (সূর্য)।

3. He heated these three lights, and from them, thus heated, the three Vedas were produced–the Rig-veda from Agni, the Yagur-veda from Vâyu, and the Sâma-veda from Sûrya

তিনি এই তিনটি আলো-কে উত্তপ্ত করেছিলেন, এবং এইভাবে উত্তপ্ত হয়ে তিনটি বেদ তৈরি হয়েছিল – অগ্নি থেকে ঋগ্বেদ, বায়ু থেকে যজুর্বেদ এবং সূর্য্য থেকে সামবেদ।[3]https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44032.htm

খেয়াল করুন, এখানে অগ্নি-বায়ু-আদিত্যকে কিন্তু বলা হচ্ছে তিনজন দেবতা। ব্রহ্মা (আরেক নাম প্রজাপতি) তপস্যা করার মাধ্যমে তাদের থেকে এই তিন বেদ (ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ) পেয়েছিলেন। এখানে তিনটি বেদের কথা বলা হচ্ছে।

বিঃদ্রঃ অথর্ববেদ বেদ কিনা সে নিয়ে খোদ হিন্দুসমাজেই বিতর্ক রয়েছে।[4]https://archive.org/details/gopathabrahmanao00gopauoft/page/2/mode/1up?q=atharva

ইশ্বরের নিঃশ্বাস থেকে

বৃহদারণ্যক উপনিষদে দেখা যায় ইশ্বরের নিশ্বাস থেকে ঋগ্বেদ, যজুর্ব্বেদ, সামবেদ, অথর্ব্বাঙ্গিরস, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা, উপনিষদসমূহ, শ্লোকসমূহ, সূত্রসমূহ, অনুব্যাখ্যান সমূহ, ব্যাখ্যান সমূহ এসেছে।

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাটবেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

যেমন আর্দ্র কাষ্ঠদ্বারা প্রজ্জ্বলিত অগ্নি হইতে পৃথক্ পৃথক্‌ ধূম নির্গত হয়, তেমনি, অয়ি মৈত্রেয়ি! ঋগ্বেদ, যজুর্ব্বেদ, সামবেদ, অথর্ব্বাঙ্গিরস, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা, উপনিষদসমূহ, শ্লোকসমূহ, সূত্রসমূহ, অনুব্যাখ্যান সমূহ, ব্যাখ্যান সমূহ—এ সমুদায়ই সেই মহাভূত হইতে নির্গত হইয়াছে—এ সমুদায়ই তাঁহা হইতে নিশ্বসিত হইয়াছে।[5]বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০, অনুবাদঃ মহেশচন্দ্র বেদান্তরত্ন (১৯২৮), পৃ ১১৬-১১৭, প্রকাশকঃ সীতানাথ তত্ত্বভূষণ

কিছু কিছু আর্য দাবিদার এখান থেকে বিশ্বাস করার চেষ্টা করে যে বেদ ঈশ্বরপ্রাপ্ত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে একই লেভেলে বেদ এবং পুরাণ। একটা ছেড়ে আরেকটা অবিশ্বাস করা, ধর্মগ্রন্থের কোনো কথাকে আংশিক সত্য এবং আংশিক মিথ্যা বলে তারা বিশ্বাস করে! হাস্যকর।

শতপথ ব্রাহ্মণের ১৪তম কান্ডে রয়েছে,[6]শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫/৪/১০ – সংস্কৃত উইকিসোর্স

स यथार्द्रैधाग्नेरभ्याहितस्य पृथग्धूमा विनिश्चरन्त्येवं वा अरेऽस्य महतोभूतस्य निश्वसितमेतद्यदृग्वेदो यजुर्वेदः सामवेदोऽथर्वाङ्गिरस इतिहासः पुराणं विद्या उपनिषदः श्लोकाः सूत्राण्यनुव्याख्यानानि व्याख्यानान्यस्यैवैतानि सर्वाणि निश्वसितानि – १४.५.४.१०

sa yathārdraidhāgnerabhyāhitasya pṛthagdhūmā viniścarantyevaṃ vā are’sya mahato bhūtasya niśvasitametadyadṛgvedo yajurvedaḥ sāmavedo’tharvāṅgirasa itihāsaḥ purāṇaṃ vidyā upaniṣadaḥ ślokāḥ sūtrāṇyanuvyākhyānāni vyākhyānānyasyaivaitāni sarvāṇi niśvasitāni[7]https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/satapatha-brahmana-sanskrit/d/doc1058647.html

শতপথ ব্রাহ্মণের ১৪তম কান্ডই বৃহদারণ্যক উপনিষদ।[8]https://texts.wara.in/vedas/upanishads/brihadaranyaka.html আর এই শ্লোকটিই আমাদের উপরে উল্লেখিত বৃহদারণ্যক উপনিষদের শ্লোক, এবং অনুবাদ একই। এখানেও বলা হচ্ছে বেদ-পুরাণ এগুলো ‘মহৎ সত্ত্বার নিঃশ্বাস’। কিন্তু যেহেতু কথিত আর্যরা (আর্যসমাজীরা) পুরাণ মানে না এবং তাকিয়াবাজিতে সেরা – ধর্মপ্রচারের স্বার্থে হিন্দুধর্মে মিথ্যাচার বৈধ[9]এই পোস্ট দেখুন তাই তারা তাদের ওয়েবসাইটে এই শ্লোকের বানোয়াট অনুবাদ করেছে এরকমঃ

/* Shatpath Brahman 14.5.4.10 states that Ishwar, who is present even beyond the Akash/Sky created the Vedas. The way breath goes out of body and then comes in, during inception of creation, Ishwar creates the Vedas and illuminates the world, and in the phase of dissolution (Pralay), Vedas no more remain in world. However just as a sapling remains inside the seed, Vedas still remain in knowledge of Ishwar, unchanged. */

তো এখানে পুরাণের উল্লেখ কই?

স্কম্ভের লোম এবং মুখ থেকে

অথর্ববেদে রয়েছে,[10]অথর্ববেদ ১০/৭/২০, হিন্দি অনুবাদঃ শ্রী রাম শর্মা আচার্য – PDF Link

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

यस्मा॒दृचो॑ अ॒पात॑क्ष॒न्यजु॒र्यस्मा॑द॒पाक॑षन्। सामा॑नि॒ यस्य॒ लोमा॑न्यथर्वाङ्गि॒रसो॒ मुखं॑ स्क॒म्भं तं ब्रू॑हि कत॒मः स्वि॑दे॒व सः ॥

হিন্দি অনুবাদঃ उस स्कम्भ के बारे में बताएँ? जिससे ऋचाएँ प्रकट हुईं, यजुर्वेद के मन्त्र प्रकट हुए, जिसके लोम साम हैं और अथर्व जिसका मुख है ॥ २० ॥

ঐ স্কম্ভ সম্পর্কে বলুন? যা থেকে ঋক (ঋগ্বেদ) প্রকট হয়, যজুর্বেদের মন্ত্র প্রকট হয়, যার লোম হচ্ছে সাম (সামবেদ) আর যার মুখ হচ্ছে অথর্ব (অথর্ববেদ)।

উইটনির অনুবাদ,[11]https://en.m.wikisource.org/wiki/Atharva-Veda_Samhita/Book_X/Hymn_7

20. From whom they fashioned off the verses, from whom they scraped off the sacrificial formula, of whom the chants [are] the hairs (lóman), the Atharvans-and-An̄girases the mouth—that Skambha etc. etc.

গ্রিফিথের অনুবাদ,[12]The Hymns Of The Atharva – Veda Vol.II
by Ralph T.h. Griffith, pg 30 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.188973/page/n34/mode/1up
[13]https://www.sacred-texts.com/hin/av/av10007.htm

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

20. Who out of many, tell me, is that Skambha From whom they hewed the lichas off, from whom they chipped the Yajus, he Whose hairs are Sāma-verses and his mouth the Atharvāngirases?

ড. অম্বেদকারের অনুবাদ,[14]https://archive.org/details/Ambedkar_CompleteWorks/21A1.Riddles%20in%20Hinduism%20PART%20I/page/n6/mode/1up

Declare who is that Skamba from whom they cut off the rick verses, from
whom they scrapped off the yajush, of whom the saman verses are the hairs
and the verses of Atharvan and Angiras the mouth.

তো এই স্কম্ভ মানে কী? স্কম্ভ কে বা কারা? এ নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। একদল মনে করে স্কম্ভ মানে হচ্ছে ব্রহ্মা দেবতা।[15]http://www.hindupedia.com/en/Skambha আরেকদল মনে করে স্কম্ভ মানে হচ্ছে শিব, শিবলিঙ্গ। একদল মনে করে স্কম্ভ হচ্ছে শিবের রুদ্র অবতার।[16]http://www.mahapashupatastra.com/2015/09/the-unassailable-glory-of-lord-bhuvaneshwara-the-primordial-skambha-supporting-the-worlds.html?m=1 আবার এদিকে আরেকদল মনে করে স্কম্ভ মানে হচ্ছে ইন্দ্রদেবতা।[17]https://www.quora.com/What-is-a-skambha-in-the-Vedas/answer/Kiron-Krishnan-1?ch=15&oid=92425209&share=28fde4bc&target_type=answer

ঈশ্বর ব্রহ্মাকে গিফ্‌ট দেন

এর উল্লেখ আছে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে,[18]শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৬/১৮, অনুবাদঃ সত্যাব্রত সামশ্রমী

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

যিনি প্রথমে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেন, এবং তাঁহাকে বেদসমূহ প্রদান করেন, আমি মুমুক্ষু হইয়া সেই আত্মজ্ঞান-প্রকাশক ( বা আত্মজ্ঞানে প্রকাশযোগ্য ) দেবতার শরণ লই।

স্বামী লোকেশ্বরানন্দের অনুবাদঃ[19]উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ৭৭৪-৭৭৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

সরলার্থঃ তিনি প্রথম ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে বেদসমূহ উপহার দেন। একজন মুমুক্ষু হিসাবে আমি সেই আত্মজ্ঞান-প্রকাশক জ্যোতিস্বরূপের শরণ নিচ্ছি ।

পরম পুরুষ থেকে উৎপন্ন

হিন্দুধর্মে পুরুষ শব্দতে অনেকক্ষেত্রে ঈশ্বরও বোঝায়, হিন্দুদের প্রাণহীন[20]মুন্ডক উপনিষদ ২/১/২ ঈশ্বর থেকেই ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ ও সামবেদ উৎপন্ন হয়েছে। এর উল্লেখ আছে মুন্ডক উপনিষদে,

Read More…
পরাশর সংহিতা PDF (3.94 MB) পঞ্চানন তর্করত্ন অনূদীত পরাশরস্মৃতি বাংলা বই

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

সরলার্থঃ সেই পুরুষ থেকে সবকিছুর উৎপত্তি। যথা: ঋক্, সাম এবং যজুঃ বেদ, দীক্ষা (অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ শুরু করার আগে যে মঙ্গলাচরণ করা হয়) সম্বন্ধে জ্ঞান, পশুবলি, দক্ষিণা দান (যা সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ; অর্থ পশু ইত্যাদি দক্ষিণা যা ঋত্বিককে দেওয়া হয়), শাস্ত্রমতে যজ্ঞের সময় সীমা, যজমানের যজ্ঞ করার যোগ্যতা এবং যজ্ঞকর্মের ফল রূপ লোকসমূহ। চন্দ্র যেসব লোক পবিত্র করে (যেমন দেবলোক) এবং সূর্য যেসব লোক (যথা পিতৃলোক) আলোকিত করে সবই ব্রহ্ম থেকে এসেছে।[21]মুন্ডকোপনিষৎ ২/১/৬, উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ২৯০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড

এবং এগুলো সহ সকল বিদ্যা ঈশ্বর ব্রহ্মাকে শিখিয়েছেন।[22]মুন্ডক উপনিষদ ১/১/১-২

বিঃদ্রঃ মুন্ডকোপনিষদে বেদকে নিম্নজ্ঞান বলা হয়েছে।[23]প্রাগুক্ত ১/১/৫

ব্রহ্মার চার মুখ থেকে উৎপন্ন

এটা লেখা আছে ভাগবত পুরাণে,[24]শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১২/৩৪-৩৯, গীতা প্রেস

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

এক সময়ে ব্রহ্মা চিন্তা করছিলেন যে ‘পূর্ব পূর্ব কল্পের মতো সুব্যবস্থিতরূপে কিভাবে প্রজা সৃষ্টি করব ?” সেই সময় তাঁর চারটি মুখ থেকে চার বেদ উদ্‌গত হল।

এ ছাড়া চাতুহোত্র বা হোতা, উদ্‌গাতা, অধবর্ষ এবং ব্রহ্মা—এই চার প্রকার ঋত্বিক সাধ্য কর্ম, উপবেদ ও ন্যায়শাস্ত্র সহ কর্মতন্ত্র অর্থাৎ যজ্ঞবিস্তার, (তপ, বিদ্যা, দান ও সত্যরূপ) ধর্মের চতুষ্পাদ এবং আশ্রম চতুষ্টয় এবং আশ্রমোচিত বিধিসমূহ—এই সবই ব্রহ্মার মুখচতুষ্টয় থেকে উৎপন্ন হয়েছিল।

বিদুর প্রশ্ন করলেন, হে তপোধন ! প্রজাপতি-পিতা | ব্রহ্মা তাঁর মুখচতুষ্টয় থেকে বেদ চতুষ্টয় উৎপন্ন করেছেন, সেই সঙ্গে তাঁর কোন মুখ থেকে কী কী সৃষ্টি করেছেন, আপনি দয়া করে সেই বৃত্তান্ত আমাকে বলুন।

মৈত্রেয় মুনি বললেন—হে বিদুর! নিজের পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর মুখ থেকে ব্রহ্মা যথাক্রমে ঋক্, যজুঃ, সাম ও অথর্ববেদ প্রকাশ করেছেন এবং এইভাবেই যথাক্রমে শস্ত্র (হোত্নকর্ম), ইজ্যা (অধবর্ষাকর্ম), স্তুতিস্তোম (উদ্‌গাতৃকর্ম) এবং প্রায়শ্চিত্ত (ব্রহ্মার কর্ম) এই সব সৃষ্টি করেছেন।

অনন্তর আয়ুর্বেদ (চিকিৎসাশাস্ত্র), ধনুর্বেদ (শস্ত্রবিদ্যা), গান্ধর্ববেদ (সঙ্গীতশাস্ত্র) ও স্থাপত্যবেদ (শিল্পবিদ্যা)—এই চার উপবেদও ক্রমশ ওই পূর্বোক্ত চারটি মুখ থেকে উৎপন্ন করেছেন।

তারপর সর্বদর্শী ভগবান ব্রহ্মা তাঁর সব মুখ থেকেই ইতিহাস-পুরাণ শাস্ত্র নামক পঞ্চম বেদ সৃষ্টি করেছেন।

একই কথা বিষ্ণুপুরাণও বলছে,[25]বিষ্ণুপুরাণ, ১ম অংশ, অধ্যায় ৫, শ্লোক ৪৭-৫৫, ২য় সংস্করণ, পৃ ১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.315733/page/n29/mode/1up

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

হিন্দু মিথোলজি বেদের উৎপত্তি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী কথা বলছে,

  • ব্রহ্মা তপস্যা করে তিন দেবতা থেকে তিনটি বেদ পেয়েছে।
  • ভেজা কাঠে আগুন দিলে যেরকম ধোঁয়া বের হয়। সেরকমভাবে ঈশ্বরের থেকে বেদ-পুরাণ-মহাভারত-সূত্র-ব্যাখ্যা এগুলো নিঃশ্বসিত হয়েছে।
  • স্কম্ভ থেকে ঋগ্বেদ-যজুর্বেদ বের হয়েছে এবং স্কম্ভের মুখ থেকে অথর্ববেদ – লোম থেকে সামবেদ উৎপন্ন হয়েছে।
  • ঈশ্বর ব্রহ্মাকে গিফ্‌ট করেছে।
  • ঈশ্বর থেকে বেদ-দীক্ষা-পশুবলি-দক্ষিণা সম্পর্কিত জ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছে, আর সেগুলো ব্রহ্মাকে ঈশ্বর শিখিয়েছেন।
  • ব্রহ্মার মুখ থেকে বেদ উৎপন্ন হয়েছে।

এখন হিন্দুরা যেটা বিশ্বাস করবে করুক। আমরা পরবর্তীতে অন্য বিশ্বাসও দেখতে যাচ্ছি যা উপরের বিশ্বাসগুলোকে ভেঙে দেয়।

বেদের রচয়িতা হিসেবে ঋষিরা

নিরুক্তে ঋষি শব্দের অর্থ দেওয়া হয়েছে ‘ঋষিদর্শনাৎ’ (ऋषिर्दार्शनात)[26]নিরুক্ত ২/১১ (অমরেশ্বর ঠাকুরের অনুবাদে রেফারেন্স ২/১/১১/৫). যার মানে হচ্ছে seer বা যে দেখেছে। একইসাথে নিরুক্তের লেখক যাস্ক বলেছেন, ঋষিরাই বেদের রচয়িতা।[27]নিরুক্ত ৩/১১ Tr. Lakshman Sarup https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/45/mode/1up (অমরেশ্বর ঠাকুর অনুবাদ ৩/১১/১২).

ঋষিঃ কুৎসো ভবতি কৰ্ত্তা স্তোমানামিত্যৌপমন্যবঃ

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাটবেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

দেবতাদের জন্য ঋষিরা নতুন স্ত্রোত্র (Chapter) রচনা করে,[28]নিরুক্ত ৪/১৬ https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/62/mode/1up

নোধা ঋষির্ভবতি নবনং দধাতি

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণেও একই কথা বলা হচ্ছে,[29]তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ২/৮/৮/৫ http://www.sanskritweb.net/yajurveda/tb-2-08.pdf

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

यामृषयो मन्त्रकृतौ मनीषिणः।

যমৃষয়ো মন্ত্রকৃতৌ মনীষিনাঃ।

Wise Rishis are the makers of mantras

‘বেদ চিরন্তন’ এই ধারণায় বিশ্বাসের ফলে কিছু হিন্দু বলতে বাধ্য হয় যে ঋষিদেরকে জাস্ট বেদ দেওয়া হয়েছিলো, তারা কোনো রচনা করেনি। যদিও এর সামান্যতম প্রমাণও নেই। এদিকে ঋষিরা বার বার দাবি করছে যে তারাই বেদ রচনা করেছে, যেমনভাবে কাঠমিস্ত্রি ঘর বানায়।

কতজন ঋষি?

উত্তরঃ ৪ জন

আর্যসমাজীরা বলে থাকে বেদ চারজন ঋষি পেয়েছিলেন। যথাঃ অগ্নি, বায়ু, অঙ্গিরা এবং সূর্য।

ব্যাপারটি ভূয়া। কারণ আমরা আগেই দেখেছি ছান্দোগ্য উপনিষদে[30]ছান্দোগ্যোপনিষৎ ৪/১৭/১-২ বলা হচ্ছে অগ্নি-বায়ু-সূর্য হচ্ছে ৩ দেবতা। অর্থাৎ, তারা ঋষিই না।

উত্তরঃ ৪১৬ জন

বেদের রচনা সম্পর্কে আরেকটি মত পাওয়া যায়, বেদ রচনা করেছেন মোট ৪১৬ জন ঋষি মিলে। এদের তথ্য Anukramani তে পাওয়া যায়।[31]The Rigveda: 3-Volume Set by Stephanie W. Jamison and Joel P. Brereton – Google Books আপনি যখন বেদ খুলবেন তখন প্রতি সুক্ততে (স্তোত্র/Chapter) একজন ঋষির নাম দেখতে পাবেন, যাদেরকে উক্ত সুক্তের রচয়িতা বলা যেতে পারে।

কিছুদিন আগে ইন্টারনেট নেভিগেট করতে করতে দেখলাম, হিন্দুদের একটি পেইজ থেকে প্রায় ৩৫৫ জন বেদের রচয়িতার নাম পোস্ট করা হয়েছে এবং স্বীকার করা হয়েছে যে ঋষিরাই বেদের Author।[32]https://archive.vn/yxtUb

আর্যসমাজীরা দাবি করে থাকে যে, ‘ঋষিরা মন্ত্র রচনা করেন নি, বরং তারা মন্ত্রের অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন ধ্যানের মাধ্যমে’। নিম্নলিখিত কারণে এই মতামত ভূয়া।

যে সকল ঋষিদের নাম সূক্তের শুরুতে উল্লেখ থাকে, অনেক সময় তাদের নাম সূক্তের ভিতরেও দেখা যায়। বৈদিক মন্ত্রের ভেতর ঋষির নাম কী করে? উদাহরণস্বরূপ, ‘বিশ্বামিত্র’ হলেন ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলের ঋষি। ঋগ্বেদের ভেতরেই[33]ঋগ্বেদ ৩/৫৩/৭,৯ তার নাম পাওয়া যায়!

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদ বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

এই ভোজবৃন্দ, বিরূপ অগ্নিরাবৃন্দ অপেক্ষা অসুর আকাশের বীর পুত্রবৃন্দ বিশ্বামিত্রকে সহস্রসূযজ্ঞে ধন দান পূর্বক তার জীবন বর্ধিত করেন ॥৭॥

মঘবা আপন শরীর হ’তে মায়া ক’রে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেন। তিনি ঋতবান্ হলেও অঋতুতে সোন পান করেন। তিনি আপন স্তুতির দ্বারা আহূত হয়ে স্বর্গলোক হ’তে মুহূর্তের মধ্যে সবনত্রয়ে গমন করেন ॥৮॥

বিশ্বামিত্র মহান্ ও ঋষি, তিনি দেবের জনয়িতা, ও দেবকর্তৃক আকৃষ্ট এবং নেতৃবৃন্দের উপদেশক; তিনি অলবিশিষ্ট নিতুর বেগ নিরুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সুদাস রাজাকে তাড়না করেছিলেন এবং ইন্দ্রকে কুশিকবংশীয়বর্গের প্রিয় করেছিলেন ॥৯॥[34]ঋগ্বেদ ৩/৫৩/৭-৯, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী ও রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা

আবার ঋষি কন্ব ঋগ্বেদের ৮ম মণ্ডলের বেশিরভাগ অংশের ঋষি, তার নাম মন্ত্রের ভিতরে প্রায় ৫০ বারের মতো এসেছে!

  • শুধু [কোনো সুক্তের] ঋষিদের নামই নয়, তাদের সমসাময়িক শাসক ও অন্য ঋষিদের নামও বৈদিক মন্ত্রগুলোতে পাওয়া যায়। যেমনঃ ঋষি বশিষ্ঠ হলেন ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলের ঋষি। এই মণ্ডলকে তাই বশিষ্ঠ মণ্ডলও বলা হয়। বশিষ্ঠ ছিলেন ঋষি বিশ্বামিত্রের সমসাময়িক এবং রাজা রামচন্দ্রের পুরোহিত (ধর্মযাজক)। তার নাম ৪৫ বার সেখানে এসেছে!
  • বেদের কোনো সুক্তে যখন কোনো পুরুষ ঋষির নাম উল্লেখ থাকে, তখন সেই সুক্তে/স্তোত্রে ব্যবহৃত pronoun/verb গুলো সর্বদা পুংলিঙ্গ হয়। সুক্তে যখন নারী ঋষিকার নাম ধারণ করে, তখন সেই সুক্তের মন্ত্রগুলোর শব্দে ব্যবহৃত সমস্ত লিঙ্গই স্ত্রীলিঙ্গ। এর দ্বারা প্রমাণ হয় বেদ মূলত ঋষি/ঋষিকারাই রচনা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যম-যমি সূক্ত[35]ঋগ্বেদ ১০/১০, অক্ষয় লাইব্রেরি প্রকাশিত ঋগ্বেদ, পৃ ১৬৩৯ দেখুন, যেখানে যম-যমী উভয়েরই কথপোকথন রয়েছে। এবং ঋষি হিসেবে বিবস্বানের ছেলেমেয়ে দেবতা যম ও দেবী যমী লিখা হয়েছে। তারা কি তাদের নিজেদের করা সংলাপ ঈশ্বরের কাছ থেকে ধ্যানের মাধ্যমে পেয়েছে? দেবতারা কি ঋষি?
  • অনেক সুক্তে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে একই রকম কথোপকথন রয়েছে। তাদেরকে সেই সুক্তগুলোর ঋষি ও ঋষিকা হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দ্র এবং তার স্ত্রী ইন্দ্রানীর মধ্যে কথোপকথন দেখুন।[36]ঋগ্বেদ ১০:৮৬ এখানে ঋষি হিসেবে ইন্দ্রকেই (ইন্দ্র প্রভৃতি) বলা হয়েছে। তাহলে কি আর্যসমাজীদের দাবিমতে দেবতা ইন্দ্রই কি তার ও তার স্ত্রীর নিজেদের সংলাপ ঈশ্বরের কাছ থেকে ধ্যানের মাধ্যমে পেয়েছে?
  • কিছু সুক্তে কোনো মন্ত্রের দেবতা হলো পরের মন্ত্রের ঋষি আর কোনো মন্ত্রের ঋষি পরের মন্ত্রের দেবতা। এই ধরনের সুক্ত ঋষি এবং দেবতার মধ্যে সংলাপ হিসাবে পরিচিত। এখন, ঋষি যদি কেবল মন্ত্রের দ্রষ্টাই হন, তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে একটি নির্দিষ্ট সুক্তে ঋষি এক মন্ত্রে দেবতা হয়ে যান এবং দেবতা অন্য মন্ত্রে ঋষি হয়ে যান? উদাহরণস্বরূপ ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৫১ নং সুক্ত দেখুন[37]ঋগ্বেদ ১০/৫১, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ১৭৬১, যেখানে অগ্নি শৌচিক এবং  দেবতার মধ্যে একটি সংলাপ চলছে। এখানে, ১-৩-৫-৭-৯ নং মন্ত্রে অগ্নি শৌচিক হলেন দেবতা এবং মন্ত্র ২-৪-৬-৮ এ তিনি হলেন ঋষি! বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট
  • আমরা প্রশ্ন রাখতে পারি, আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ স্বরস্বতী উরফে মূলশঙ্কর ত্রিবেদী কি সত্যিই বেদের কোন অংশ বুঝতে পেরেছেন? যদি হ্যাঁ, তবে কেন তার নাম বেদে উল্লেখ নেই? কেন আর্যসমাজীরা তাকে মহর্ষি বলে থাকে?
  • সমগ্র বেদে একটি সুক্তেও শ্রী-রাম, শ্রী-কৃষ্ণ, শ্রী-ব্যাস এর নাম নেই, যারা ভারতীয় সাহিত্যের নক্ষত্র। হিন্দুদের কাছে এর অর্থ কি তারা বেদ বোঝেনি?
  • বেদে কিছু ঋষির বংশবৃক্ষ, বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ইত্যাদি) উল্লেখ আছে। ঋষিরা যদি কেবল দ্রষ্টাই হতেন, তাহলে তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কাহিনিগুলো কীভাবে বৈদিক মন্ত্রগুলোতে তাদের মাথা গোঁজার ঠাই পেল? উদাহরণস্বরূপ, বেদ আমাদের কন্ব পরিবারের ২২ জন ঋষি, অত্রি পরিবারের ৩৬ জন, বশিষ্ঠ পরিবারের ১১ জন ঋষি ইত্যাদি সম্পর্কে জানায়।
Read More…
ইসলামে দাসী-স্ত্রী এবং যৌন বিশুদ্ধতা

বৈদিক স্তোত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঋষিদের মতামত

আমি আগেই বলেছি যে প্রতিটি স্তোত্রের ঋষিদের নাম অনুকর্মণিতে পাওয়া যায় । এটি শ্লোকের সংখ্যা, ঋষিদের নাম ও পরিবার, দেবতাদের নাম ইত্যাদির বিবরণী।

পরবর্তী সময়ে যখন বেদকে ‘চিরন্তন/নিত্য’ বলে দাবি করা হয়েছিল, তখন এটা জাহির করা হয়েছিল যে এই ঋষিরা কেবলমাত্র সেই ব্যক্তি যারা বেদের স্তোত্র জাস্ট “দেখেছিলো” কিংবা তাদেরকে কোনোভাবে যোগাযোগ করে দেওয়া হয়েছিলো ঈশ্বরের দ্বারা। তবে এর ন্যুনতম প্রমাণও নেই।

এখন বেদের উৎপত্তি সম্পর্কে স্বয়ং ঋষিদের মতামত কি। নিচের পয়েন্টগুলির মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যাবে,

[ক] ঋগ্বেদের ২য় মন্ত্রে আছে,

অগ্নি পূর্ব ঋষিদের স্তুতিভাজন ছিলেন, নতুন ঋষিদেরও স্তুতিভাজন; তিনি দেবগণকে এ যজ্ঞে আনুন।[38]ঋগ্বেদ ১/১/২, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র

এই মন্ত্রে প্রমাণ হচ্ছে যে এই মন্ত্র কোনো নতুন ঋষির কৃত। পুরাতন ঋষির কাছে এই মন্ত্রের অস্তিত্ব ছিলো না। এবং কোনো জিনিস যদি চিরন্তন হয় সেখানে ‘নতুন’ ‘পুরাতন’ বলে কিছু থাকবে না।

[খ] ঋগ্বেদের ১০ মণ্ডলে দেখা যায়, ঋষি হচ্ছে বেদমন্ত্রের রচনাকর্তাঃ

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

যো অদধাজ্জ্যেতিষি জ্যোতিরন্তর্যো অসৃজন্মধুনা সং মধূনি। অধ প্রিয়ং শূষমিন্দ্রায় মন্ম ব্রহ্মকৃতো বৃহদুক্‌থাদবাচি৷

যিনি জ্যোতির্ময় পদার্থে জ্যোতিঃ সংস্থাপন করিয়াছেন, যিনি মধু দিয়া সোমরস প্রভৃতি মধুর বস্তু সকল সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহার উদ্দেশে বৃহৎ উকথ নামক বেদমন্ত্র রচনাকর্তা এই চমৎকার ওজস্বি স্তব উচ্চারণ করিলেন।[39]ঋগ্বেদ ১০/৫৪/৬, রমেশচন্দ্র, অক্ষয় লাইব্রেরি কলকাতা

পণ্ডিত শ্রী রাম শর্মা আচার্যও একই অনুবাদ করেছেন,[40]https://archive.org/details/rigved-part-4-hindi-translation-shri-ram-sharma-acharya/page/n234/mode/1up

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

जिसने सूर्यादि ज्योतियों में ज्योति रूप तेज को स्थापित किया है, जिसने मधुर रसों से युक्त सोमादि रसों का सृजन किया है, इस प्रकार के उन इन्द्रदेव के निमित्त बृहदुक्थ ( मन्त्रों के निर्माणकर्ता ऋषि) ने अतिप्रिय बलवर्द्धक स्तोत्र कहा ||६||

jisane sooryaadi jyotiyon mein jyoti roop tej ko sthaapit kiya hai, jisane madhur rason se yukt somaadi rason ka srjan kiya hai, is prakaar ke un indradev ke nimitt brhadukth (mantron ke nirmaanakarta rshi) ne atipriy balavarddhak stotr kaha ||6||

[গ] ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলে দেখা যায়,

যে সকল প্রাচীন ঋষি ছিলেন ও সে সকল নূতন ঋষি আছেন, সকলে আপনার স্তোত্র উৎপাদন করছেন। আমাদের প্রতি আপনার সখ্য মঙ্গলকর হোক। আপনারা আমাদের সর্বদা স্বস্তির দ্বারা পালন করুন।[41]ঋগ্বেদ ৭/২২/৯, রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ১০৯২-১০৯৩

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

এখানে এই মন্ত্রের ঋষি বসিষ্ঠ দেবতা ইন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলছেন আগের জেনারেশনের ঋষিরা আর নতুন ঋষিরা সবাই ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে স্তোত্র/সুক্ত বানিয়েছে।

[ঘ] বেদের স্তোত্র কে নির্মাণ করে?

হে বহুভাব প্রাপ্ত অগ্নি! আমি তোমার স্তোতা। ধীর কর্মকুশল ব্যক্তি যেরূপ রথ নির্মাণ করে, সেরূপ আমি তোমার জন্য এ স্তোত্র নির্মাণ করেছি। হে অগ্নিদেব! যদি তুমি এ গ্রহণ কর তা হলে আমরা বহুব্যাপ্ত জল লাভ করব।[42]ঋগ্বেদ ৫/২/১১, রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ৭৯৭-৭৯৯

[ঙ] ঋগ্বেদের অন্যত্র ঋষিদের দ্বারা নতুন স্তোত্র রচনার কথা পাওয়া যায়,

হে ইন্দ্র! তুমি স্তুত ও স্তুবমান হয়ে, জল যেরূপ নদী পূর্ণ করে, সেরূপ স্তোতার অন্ন প্রবৃদ্ধ কর। হে হরিবিশিষ্ট ইন্দ্র! আমরা তোমার উদ্দেশে নূতন স্তোত্র করছি, আমরা যেন রথবান হয়ে স্তুতিদ্বারা সর্বদা তোমর ভজনা করতে পারি।[43]ঋগ্বেদ ৪/১৬/২১

[চ] নতুন স্তোত্র রচনার কথা ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলেও আছে,

আমি এই নতুন স্তোত্র করিতেছি। হে আদিত্যগণ, রুদ্রগণ, বায়ুগণ! ইহাকে সেবা কর। দ্যুলোকভব পার্থিব ও পৃশ্নিজাত এবং যে কেহ যজ্ঞীয় আছ, সকলে আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর।[44]ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১৪

[ছ] শুক্ল যজুর্বেদে আছে,

অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুর-সম্ভবাৎ। ইতি শুশ্রুম ধীরণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষির। [45]শুক্ল যজুর্বেদ ৪০/১০

বিজনবিহারী গোস্বামীর অনুবাদ,

ধীরগণ, কার্যব্রহ্মের উপাসনার ফল অণিমাদি ঐশ্বর্য রূপ, আর অব্যাকৃতের উপাসনার ফল প্রকৃতিতে লয় ইত্যাদি বলে থাকেন—তত্ত্ববিদগণের নিকট হতে আমরা এরূপ শুনেছি, যারা আমাদের পূর্বোক্ত উপাসনার ফল বিচার করেছেন।[46]যজুর্বেদ সংহিতা, বিজনবিহারী গোস্বামী, পৃ ২৫৬, হরফ প্রকাশনী, প্রিন্টঃ ১৯৬০

দুর্গাদাস লাহিড়ীর অনুবাদ,

সম্ভব বা স্থূল জগতের উপাসনায় ভিন্নই ফল হয় এবং অসম্ভূতা মূল প্রকৃতির উপাসনাময় ভিন্ন ফলেরই কথা বলা হয়ে থাকে–ধীমান জনগণের মুখে এই রকম কথন আমরা শ্রবণ করি; যে ধীমান তত্ত্ববিদগণ আমাদের নিমিত্ত সেই ব্রহ্মতত্ত্ব বিবেচনা করে দিয়েছেন।[47]শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা ৪০/১০, দুর্গাদাস লাহিড়ী, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা

ধীমান তত্ত্ববিদদের থেকে কে শুনেছে? নাকি ঋষি ধ্যানের মাধ্যমে জেনেছে যে সে শুনেছে? এই বাক্য যিনি বলেছেন, তিনি অন্যকোনো ধীর ঋষির নিকট থেকে শুনে তবে ঐ মন্ত্র লিখেছেন। চিরন্তন কোনো বেদে তো পূর্বের কারও কথা শোনার কথা নয়।

[জ] ঋগ্বেদে আছে,

হে ইন্দ্র! অসংখ্য স্তোত্র তোমাতে সঙ্গত হয়। তোমা হইতে স্তোতৃবর্গের পর্যাপ্ত প্রশংসা নির্গত হয়। পূৰ্ব্বকালে ও ইদানীন্তন সময়ে ঋষিগণের স্তোত্র, উপাসন ও মন্ত্র সকল ইন্দ্রের পূজা বিষয়ে পরস্পর স্পর্দ্ধা করে।[48]ঋগ্বেদ ৬/৩৪/১

পূর্বকালের এবং ইদানীন্তন ঋষির কথা নিশ্চয়ই চিরন্তন কোনো গ্রন্থে থাকার কথা নয়? উপরের মন্ত্রগুলো থেকে সুস্পষ্ট যে উক্ত মন্ত্রগুলো ঋষিরাই রচনা করেছে। দেখা যাচ্ছে যে ঋষিদের এই ধারণা ছিলো যে দেবতাদের নামে নতুন নতুন স্তোত্র রচনা করলে তারা খুশি হবেন। তাই তাদের নামে নতুন নতুন স্তোত্র রচনার কথা এসেছে।

পাণিনি খোলাখুলিভাবে বলেছেন যে নতুন এবং পুরনো ব্রাহ্মণগ্রন্থ রয়েছে। বর্তমান গবেষণাতেও পাওয়া যায় শত বছরের পার্থক্য আছে ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলোর ডেইটিং এ।[49]Michael Witzel, “Tracing the Vedic dialects” in Dialectes dans les litteratures Indo-Aryennes ed. Caillat, Paris, 1989, 97–265.[50]Biswas et al (1989), Cosmic Perspectives, Cambridge University Press, ISBN 978-0521343541, pages 42-43 ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদের সাথে যুক্ত থাকে। ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদের অংশ এবং বেদ।[51]পূর্বমীমাংসা বা জৈমিনি সূত্র ২/১/৩৩

এটা হিন্দুরা স্বীকার করে থাকেন, এবং বেদ যে মনুষ্য রচিত সেটাও হিন্দুরা বিশেষ করে বৈষ্ণবরা স্বীকার করে থাকে। তারা মনে করে বেদ হলো তাদের ইতিহাসগ্রন্থ।[52]https://archive.ph/ylvNx

হিন্দুদের আরেকটি লজিক হলো ধ্বনি নিত্য, তাই বেদও নিত্য। এ হিসাবে বিশ্বের যেকোনো বই-পুস্তকই নিত্য ও চিরন্তন।

হিন্দুদের আরেকটি যুক্তি হলো ‘বেদ মানে জ্ঞান’, আর জ্ঞান চিরন্তন ও ‘অপৌরুষেয়’, তাই বেদও চিরন্তন ও অপৌরুষেয়। আমরা এখানে বেদ সংহিতা নামক কিতাব ও এই ভার্সগুলোর কথা বলেছি। তাছাড়া এই হিসাবে দুনিয়ার তাবৎ কিতাবই বেদ!

‘বেদ চিরন্তন’ হিসাবে বিশ্বাসী কিছু হিন্দু এই দাবি করতে পারে যে, পুরনো ঋষি বলতে ঋষিদের পূর্বজন্ম, আর নতুন ঋষি বলতে বর্তমান জন্ম। এই লজিকও তাদের বিরুদ্ধে যায়। ‘পূর্বের’ ঋষিদের কথা – পূর্বের ঋষিদের থেকে শোনা কথা তাদের গ্রন্থে থাকতে পারে না, যেহেতু তাদের বিশ্বাসমতে বেদ চিরন্তন এবং সৃষ্টির আদি থেকেই নাকি পৃথিবীতে আছে। নতুন স্তোত্রও সম্ভব নয়।

বেদ রচনার অভ্যন্তরীণ প্রমাণ

ধরুন আপনি অতি পুরনো একটি বই খুঁজে পেলেন। এখন সেটার বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেইটিং আছে, কে কখন লিখেছে সেটক গবেষণাগারে পাঠাতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা সেই বইয়েই পাওয়া যেতে পারে। লেখকের নাম, লিখার তারিখ ইত্যাদি। বেদ চিরন্তন হয়ে থাকলে বেদের মধ্যে এমন লেখকদের কথা থাকার কথা নয় যারা তুলনামূলক আমাদের কাছাকাছি সময়ে বসবাস করতেন।

বেদ থেকেই তথ্য পাওয়া যায় কখন কোন পদ্ধতিতে কোন স্থানে সেটা লিখা হয়েছিলো। বেদে সিন্ধু (Indus), গঙ্গা (Gangas), স্বরস্বতী (Saraswati) নদীর কথা এসেছে। যা আমাদের ধারণা দেয়, আর্যরা এদেশে এসে কোন এলাকায় ছিলো।

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

বেদ থেকে দেখা যায় পারস্য থেকে আর্য উপজাতিরা এদেশে এসে কীভাবে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করে করে বসবাস করছিলো। তাদের ধর্মগ্রন্থ বেদে সেসব সময়ের কথা, যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্র, গান গাওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। বেদে আদিবাসী অনার্যদের দস্যু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যুদ্ধে জয়লাভের পর দেবতাদের গুণগাণ করা হয়েছে, আবার তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য দেবতাদের আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। যেমনঃ ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলেই তিনটা সুক্ত[53]ঋগ্বেদ ১/১৭৪-১৭৬, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ লক্ষীকান্ত পাত্র দেখানো যায় –

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

অনার্য্য আদিবাসীদের সাথে আর্য্য উপজাতিদের যুদ্ধের কথা আর্য গ্রন্থ বেদেই দেখা যায়। আরও দেখা যেতে পারেঃ

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

Response to ‘বেদে কোনো ইতিহাস নেই’

তাকিয়াবাজ দয়ানন্দ ও তার শিষ্যরা দাবি করে বেদে কোনো ইতিহাস নেই। বেদে নাকি ইতিহাস খোঁজা শুরু হয়েছে সায়নাচার্যের সময় থেকে। অথচ নিরুক্তের লেখক যাস্কও বলেছেন বেদে ইতিহাস রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঋগ্বেদ ১.১০৫.১৭ মন্ত্রটিতে ঋষি ত্রিতের কূপে পড়ে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে বলে লিখেছেন যাস্ক।[54]নিরুক্ত ৪/৬

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

এর ভাষ্যে স্কন্দস্বামীরও মত এই যে এই মন্ত্রে ইতিহাস রয়েছে, আর দূর্গাচার্য্যের মত এই যে বেদের সূক্ত ইতিহাসযুক্ত হতে পারে, যার একটি উদাহরণ এটি। এই মন্ত্রটির রমেশচন্দ্রের অনুবাদ দেখা যাক,

ত্রিত কূপে পতিত হয়ে রক্ষার জন্য দেবগণকে আহ্বান করছে; বৃহস্পতি তাকে পাপরূপ কূপ হতে উদ্ধার করে তার আহ্বান শ্রবণ করেছিলেন। হে দ্যাবা পৃথিবী! আমার বিষয় অবগত হও।

এটাই নিরুক্ত মেনে করা অর্থ। আর ওদিকে আর্যসমাজীদের অনুবাদ দেখি চলুন। দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুবাদঃ

पदार्थ –
जो (उरु) बहुत (तत्) उस विद्या के पाठ को (शुश्राव) सुनता है वह विज्ञान को (कृण्वन्) प्रकट करता हुआ (त्रितः) विद्या, शिक्षा और ब्रह्मचर्य्य इन तीन विषयों का विस्तार करने अर्थात् इनको बढ़ाने (कूपे) कूआ के आकार अपने हृदय में (अवहितः) स्थिरता रखने और (बृहस्पतिः) बड़ी वेदवाणी का पालनेहारा (अंहूरणात्) जिस व्यवहार में अधर्म है उससे अलग होकर (ऊतये) रक्षा, आनन्द, कान्ति, प्रेम, तृप्ति आदि अनेकों सुखों के लिये (देवान्) दिव्य गुणयुक्त विद्वानों वा दिव्य गुणों को (हवते) ग्रहण करता है। और शेष मन्त्रार्थ प्रथम के तुल्य जानना चाहिये ॥ १७ ॥

যিনি (उरु) অনেক (तत्) জ্ঞানের পাঠ (शुश्राव) শুনেন তিনি (कृष्णवन्) জ্ঞান, শিক্ষা এবং ব্রহ্মচর্য এই তিনটি বিষয়কে প্রসারিত করার জন্য জ্ঞান (त्रितः) প্রকাশ করেন, অর্থাৎ তাদের (कूपे) বৃদ্ধি করে একটি কূপের আকার দেন। (अवहितः) নিজের অন্তরে অটলতা রাখা এবং (बृहस्पतिः) মহান বৈদিক শব্দের রক্ষক (अन्हुर्णात्) যে আচরণে অন্যায় (ऊतये) আছে তার থেকে রক্ষা, আনন্দ, তেজ, প্রেম, তৃপ্তি এবং অন্যান্য অনেক আনন্দ (देवान्)। বিদ্বান ব্যক্তিরা ঐশ্বরিক গুণাবলী দ্বারা সমৃদ্ধ বা ঐশ্বরিক গুণাবলী ধারণ করে। এবং অবশিষ্ট মন্ত্র-অর্থ প্রথমটির সমান হিসাবে পরিচিত হওয়া উচিত।

भावार्थ – जो मनुष्य वा देहधारी जीव अर्थात् स्त्री आदि भी अपनी बुद्धि से प्रयत्न के साथ पण्डितों की उत्तेजना से समस्त विद्याओं को सुन, मान, विचार और प्रकट कर खोटे गुण स्वभाव वा खोटे कामों को छोड़कर विद्वान् होता है, वह आत्मा और शरीर की रक्षा आदि को पाकर बहुत सुख पाता है ॥ १७ ॥

অর্থ- যে পুরুষ বা দেহজ প্রাণী অর্থাৎ নারী প্রভৃতি তার বুদ্ধির প্রচেষ্টায় সমস্ত জ্ঞান শ্রবণ করে, গ্রহণ করে, প্রতিফলিত করে, মিথ্যা গুণ, স্বভাব বা মিথ্যা কর্ম বর্জন করে, সে আত্মা ও দেহকে রক্ষা করে। আদিকে পেয়ে অনেক সুখ।

অথচ দয়ানন্দ সরস্বতীকে বৈদাঙ্গিক নৈরুক্তিক অনুবাদক দাবি করে ইন্টারনেট আর্যরা। তুলসীরামের অনুবাদ দেখুন,

Trita, the soul in possession of simultaneous vision of past, present and future time, having achieved efficiency in knowledge, action and prayer, withdrawn into the cave of the heart, or, even the soul fallen into disarray in all the three ways and deep in the well of desperation, calls upon the Lord for succour, protection and spiritual elevation. The Lord, Brhaspati, lord of the universe and universal voice, listens and creates a wide path of freedom from sin, despondency and limitations. May the heaven and earth know that path and reveal the words of prayer to me.

ত্রিতা (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের) যুগপত দৃষ্টির অধিকারী আত্মা, জ্ঞান, কর্ম ও প্রার্থনায় দক্ষতা অর্জন করে, হৃদয়ের গুহায় প্রত্যাহার করে, এমনকি আত্মাও তিনটি উপায়ে এবং গভীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হতাশার কূপে, সাহায্য, সুরক্ষা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রভুকে ডাকে। ভগবান, ব্রহ্স্পতি, ব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি এবং সর্বজনীন কণ্ঠস্বর, শোনেন এবং পাপ, হতাশা এবং সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তির বিস্তৃত পথ তৈরি করেন। আসমান ও জমিন যেন সেই পথ জানতে পারে এবং আমার কাছে প্রার্থনার বাণী প্রকাশ করে।

দেখুন ঋষি ত্রেতাকে তিন যুগ বানিয়ে দিয়েছে তুলসীরাম। কূপকে ‘হতাশার কূপ’ বানিয়ে দিয়েছে সে। এসব জালিয়াতির কারণেই আমরা আর্যসমাজের বেদের অনুবাদ কোট করি না।

Read More…
সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল?

উপসংহার

আমরা হিন্দু মিথোলজিও উল্লেখ করেছি, আর বেদও উল্লেখ করেছি। বেদ নিজেই বলছে যে এগুলো ঋষিদের দ্বারা রচিত। বেদ নিজেই প্রমাণ করে এগুলো যখন রচনা করা হয়েছিলো তখন আর্যরা বেশি একটা ভারতে প্রবেশ করতে পারে নি, উত্তর পশ্চিম দিকেই স্থানীয়দের সাথে অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো।

যুদ্ধে প্রায়শই বিজয় লাভকে কোনো স্তোত্রের-মন্ত্রের গুণ হিসাবে বিশ্বাস করতো আর্যরা। যেমন ঋগ্বেদের এই ভার্সে,

এইরূপেই ইহাঁরা সুখে নদীপার হইয়াছিলেন। এইরূপেই ইহাঁরা ভেদকে বিনাশ করিয়াছিলেন। হে বাসিষ্ঠগণ! এইরূপেই দশজন রাজার সহিত যুদ্ধে তোমাদের মন্ত্রবলে ইন্দ্র সুদাসরাজকে রক্ষা করিয়াছিলেন।[55]ঋগ্বেদ ৭/৩৩/৩

এ ধরণের মন্ত্রগুলো আর্যদের ক্রুসেড/পবিত্র ধর্মযুদ্ধে জয়লাভের মূলমন্ত্র হিসাবে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। এসব মন্ত্র আর পূর্বপুরুষদের কথাগুলো আর্যদের মাঝে ছড়িয়ে আসতে থাকে। আজকের এই বেদসংহিতা গুলো বহু বর্ষ অতিক্রম করে এখানে এসেছে। এসব উপকথার নানান জিনিসই পরিবর্তিত হয়েছে, নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে, অনেক কল্পকথা হারিয়ে গেছে। সে গল্প আরেকদিন।

শেষে উপসংহারে এটাই বলা যায়, হিন্দু ধর্মগ্রন্থমতেই যারা বিশ্বাস করে বেদ সংহিতা গুলো ঈশ্বর দিয়েছেন সেটা অযৌক্তিক। বরং সর্বোচ্চ তারা তাদের ধর্মানুসারে এটা বিশ্বাস করতে পারে বেদের সুক্তগুলোর সাথে যে ঋষির নাম আছে, সে ই সেটা রচনা করেছে।

Footnotes

Footnotes
1 ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৪র্থ প্রপাটক, খন্ড ১৭, শ্লোক ১-২, বসুমতী সাহিত্য মন্দির, পৃ ৩৫৪
2 শতপথ ব্রাহ্মণ ১১/৫/৮/১-৩, Satapatha Brahmana Part V (SBE44), Julius Eggeling tr. [1900], page 102-103 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.37912/page/n152/mode/1up
3 https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44032.htm
4 https://archive.org/details/gopathabrahmanao00gopauoft/page/2/mode/1up?q=atharva
5 বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০, অনুবাদঃ মহেশচন্দ্র বেদান্তরত্ন (১৯২৮), পৃ ১১৬-১১৭, প্রকাশকঃ সীতানাথ তত্ত্বভূষণ
6 শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫/৪/১০ – সংস্কৃত উইকিসোর্স
7 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/satapatha-brahmana-sanskrit/d/doc1058647.html
8 https://texts.wara.in/vedas/upanishads/brihadaranyaka.html
9 এই পোস্ট দেখুন
10 অথর্ববেদ ১০/৭/২০, হিন্দি অনুবাদঃ শ্রী রাম শর্মা আচার্য – PDF Link
11 https://en.m.wikisource.org/wiki/Atharva-Veda_Samhita/Book_X/Hymn_7
12 The Hymns Of The Atharva – Veda Vol.II
by Ralph T.h. Griffith, pg 30 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.188973/page/n34/mode/1up
13 https://www.sacred-texts.com/hin/av/av10007.htm
14 https://archive.org/details/Ambedkar_CompleteWorks/21A1.Riddles%20in%20Hinduism%20PART%20I/page/n6/mode/1up
15 http://www.hindupedia.com/en/Skambha
16 http://www.mahapashupatastra.com/2015/09/the-unassailable-glory-of-lord-bhuvaneshwara-the-primordial-skambha-supporting-the-worlds.html?m=1
17 https://www.quora.com/What-is-a-skambha-in-the-Vedas/answer/Kiron-Krishnan-1?ch=15&oid=92425209&share=28fde4bc&target_type=answer
18 শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৬/১৮, অনুবাদঃ সত্যাব্রত সামশ্রমী
19 উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ৭৭৪-৭৭৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
20 মুন্ডক উপনিষদ ২/১/২
21 মুন্ডকোপনিষৎ ২/১/৬, উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ২৯০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
22 মুন্ডক উপনিষদ ১/১/১-২
23 প্রাগুক্ত ১/১/৫
24 শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১২/৩৪-৩৯, গীতা প্রেস
25 বিষ্ণুপুরাণ, ১ম অংশ, অধ্যায় ৫, শ্লোক ৪৭-৫৫, ২য় সংস্করণ, পৃ ১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.315733/page/n29/mode/1up
26 নিরুক্ত ২/১১ (অমরেশ্বর ঠাকুরের অনুবাদে রেফারেন্স ২/১/১১/৫).
27 নিরুক্ত ৩/১১ Tr. Lakshman Sarup https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/45/mode/1up (অমরেশ্বর ঠাকুর অনুবাদ ৩/১১/১২).
28 নিরুক্ত ৪/১৬ https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/62/mode/1up
29 তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ২/৮/৮/৫ http://www.sanskritweb.net/yajurveda/tb-2-08.pdf
30 ছান্দোগ্যোপনিষৎ ৪/১৭/১-২
31 The Rigveda: 3-Volume Set by Stephanie W. Jamison and Joel P. Brereton – Google Books
32 https://archive.vn/yxtUb
33 ঋগ্বেদ ৩/৫৩/৭,৯
34 ঋগ্বেদ ৩/৫৩/৭-৯, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী ও রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা
35 ঋগ্বেদ ১০/১০, অক্ষয় লাইব্রেরি প্রকাশিত ঋগ্বেদ, পৃ ১৬৩৯
36 ঋগ্বেদ ১০:৮৬
37 ঋগ্বেদ ১০/৫১, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ১৭৬১
38 ঋগ্বেদ ১/১/২, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র
39 ঋগ্বেদ ১০/৫৪/৬, রমেশচন্দ্র, অক্ষয় লাইব্রেরি কলকাতা
40 https://archive.org/details/rigved-part-4-hindi-translation-shri-ram-sharma-acharya/page/n234/mode/1up
41 ঋগ্বেদ ৭/২২/৯, রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ১০৯২-১০৯৩
42 ঋগ্বেদ ৫/২/১১, রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, পৃ ৭৯৭-৭৯৯
43 ঋগ্বেদ ৪/১৬/২১
44 ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১৪
45 শুক্ল যজুর্বেদ ৪০/১০
46 যজুর্বেদ সংহিতা, বিজনবিহারী গোস্বামী, পৃ ২৫৬, হরফ প্রকাশনী, প্রিন্টঃ ১৯৬০
47 শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা ৪০/১০, দুর্গাদাস লাহিড়ী, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা
48 ঋগ্বেদ ৬/৩৪/১
49 Michael Witzel, “Tracing the Vedic dialects” in Dialectes dans les litteratures Indo-Aryennes ed. Caillat, Paris, 1989, 97–265.
50 Biswas et al (1989), Cosmic Perspectives, Cambridge University Press, ISBN 978-0521343541, pages 42-43
51 পূর্বমীমাংসা বা জৈমিনি সূত্র ২/১/৩৩
52 https://archive.ph/ylvNx
53 ঋগ্বেদ ১/১৭৪-১৭৬, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ লক্ষীকান্ত পাত্র
54 নিরুক্ত ৪/৬
55 ঋগ্বেদ ৭/৩৩/৩

ইন্দো আর্য

❝গোবর খেলে করোনা সারে।❞ – গোবেদ ১/৬৯/৬৯ করোনা থেকে বাঁচতে গোবর খেয়েছিলাম। গোরুর কৃপায় এখন আমার HIV পজিটিভ।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Back to top button
FromMuslims We would like to show you notifications for the latest updates.
Dismiss
Allow Notifications