জাহেলী যুগে নারীদের অধিকার কেমন ছিলো? কেমন ছিলো তাদের উত্তরাধীকার? কেমন ছিলো তাদের অর্থনৈতিক অধিকার?
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।…‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! জাহিলী যুগে মহিলাদের কোন অধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে যে বিধান অবতীর্ণ করার ছিল তা অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের হক হিসাবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন।…[1]সহিহুল বুখারী ৪৯১৩ তাওহীদ পাব্লিকেশন্স, ইফা ৪৫৪৮; সহিহুল মুসলিম ১৮/৫, হাঃ ১৪৭৯
জাহেলী যুগে নারীদের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার
নারীদের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারহীনতা
সেসময় নারীরা সম্পদের উত্তরাধিকার পেতো না।[2]সূরা আন নাহল ৫৮,৫৯ এর তাফসীর ইবনে কাসীর[3]নিম্নোক্ত হাদিসে ‘সেসময়’ বলতে ইসলামের প্রাথমিক যুগ বোঝানো হয়েছে, তখন আল্লাহ তা’আলা শুধুমাত্র অসিয়ত করার আয়াতটি নাজিল করেছিলেন। সেখানে কাকে … See Full Note
উপরন্তু তারা নিজেরাই ছিলো সম্পত্তি!
কেউ মারা গেলে তার স্ত্রীও তার উত্তরাধিকারের সম্পত্তি হয়ে যায়।
যেমনঃ আপনার বাবা মারা গেলে(যদি আপনি উত্তরাধিকার হোন) আপনি আপনার সৎ-মায়ের মালিক হয়ে গেলেন। আপনি চাইলে সেই সৎ-মাকে বিবাহ করতে পারেন, চাইলে যার সাথে ইচ্ছা বিবাহ দিতে পারেন, চাইলে তাকে আজীবন বিধবারূপেই রাখতে পারেন, নতুবা তাকে অন্য কোনো কাজে বাধ্য করতে পারেন।
মানে আপনি আপনি আপনার বাবার সমস্ত কিছুর অধিকার লাভ করলেন, তাঁর স্ত্রীরও!
আপনার বাবার স্ত্রী কোনোকিছুই পেলো না!
অর্থাৎ, উত্তরাধিকার পেলো না।
(আমরা সেই আলোচনার দিকে এগুচ্ছি)
জাহেলরা পিতার মৃত্যুর পর বিমাতাকে বিয়ে করতো।[4]সীরাতে সরওয়ারে আলম খণ্ড ১, পৃ ৯৬, আধুনিক প্রকাশনী
কারো স্বামী মারা গেলে সেই মহিলাকে যদি কেউ একখণ্ড কাপড় ছুড়ে মারে তবে সে ঐ মহিলার অধিকার লাভ করলো। সেই মহিলা এই লোকের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। সেই লোক যা চাইবে তাই হবে। সেই লোক মহিলাটিকে বিবাহের অনুমতি দিলে বিবাহ করতে পারবে, আর চাইলে অনুমতি না দিয়ে সারাজীবনই বিধবা রেখে দিতে পারবে। অনেকক্ষেত্রে নারীরা তাদেরকে মুক্তিপণ দিয়ে বিবাহের অনুমতি আদায় করতো।
(আমরা সেই আলোচনার দিকে এগুচ্ছি)
পিতৃহীন মেয়েদেরকে তাদের অভিভাবক (যেমনঃ চাচা) চাইলে সারাজীবনই অবিবাহিত রাখতে পারতো, কিংবা…।
(আমরা সেই আলোচনার দিকে এগুচ্ছি)
দাসীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা
দাসীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। সেই অর্থ যাতে মনিব পায় সেজন্য দাসীকে একাজে জোর করা হতো!
এই পয়েন্টগুলো নিয়ে সামনে আলোচনা আছে। সেখানেই রেফারেন্স পেয়ে যাবেন।
পশুর মাংসে ও দুধে নারীর অনধিকার
নারীরা পশুর দুধ খেতে পারতো না। পশু যেই বাচ্চা জন্ম দিতো সেটা জবাই করলেও খেতে পারতো না, শুধু পুরুষরা খেতো।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
আর তারা বলে, ‘এই চতুষ্পদ জন্তুগুলোর পেটে যা আছে, তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং আমাদের স্ত্রীদের জন্য হারাম। আর যদি তা মৃত হয়, তবে তারা সবাই তাতে শরীক’। অচিরেই তিনি তাদেরকে তাদের কথার প্রতিদান দেবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী।[5]কুরআন ৬ঃ১৩৯
এই আয়াতের তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে প্রাসঙ্গিক অংশটুকু:
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কাফিররা যে বলতো, এই পশুগুলোর গর্ভে যা কিছু রয়েছে তা আমাদের পুরুষদের জন্যে নির্দিষ্ট।’ এর দ্বারা পশুর দুধ উদ্দেশ্য। তারা কোন কোন পশুর দুধ স্ত্রী লোকদের উপর হারাম করে দিতো এবং পুরুষেরা পান করতো। যদি বকরীর নর বাচ্চা পয়দা হতো তবে তা যবাই করে শুধু পুরুষ লোকেরাই খেতো, নারীদেরকে দিতো না। তাদেরকে বলতোঃ “তোমাদের জন্যে এটা হারাম।” মাদী বাচ্চা হলে ওটাকে যবাই করতো না, বরং পালন করতো। আর যদি মৃত বাচ্চা পয়দা হতো তবে পুরুষ নারী সবাই মিলিতভাবে খেতো। আল্লাহ এরূপ করতে নিষেধ করলেন।
শাবী (রঃ) বলেন যে, বাহীরা পশুর দুধ শুধুমাত্র পুরুষেরাই খেতো। কোন পশু মরে গেলে পুরুষদের সাথে নারীদেরকেও অংশ দেয়া হতো।[6]তাফসীরে ইবনে কাসীর
নারীরা সমাজে আর্থিক দায়বদ্ধতার বস্তু ছিলো
জাহেলী যুগে নারীদের আর্থিক দায়বদ্ধতার বস্তু হিসেবে ও বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এটি ইসলাম বিদ্বেষী লেখক রবার্ট স্পেন্সারও স্বীকার করেছেন।[7]Robert Spencer, The Truth About Muhammad, p.34; (An Eagle Publishing Company, Washington, DC, 2006).
ব্যতিক্রম
উঁচু সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলারা অল্প অধিকার পেতো। সম্পদ-সম্পত্তিও পেতে দেখা যেতো।[8]আর রাহীকুল মাখতুম, জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি, পৃ ৫
যেমনঃ খাদিজা (রাদ্বিঃ) ছিলেন একজন বণিক এবং গোত্রনেতার কন্যা। খাদিজা (রাদ্বিঃ)-এর ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা কারোরই অজানা নয়।
জাহেলী যুগের বিয়ে-শাদী ও এসম্পর্কে
চার রকম বিবাহ
জাহেলী যুগে আল্লাহপ্রদত্ত বিয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি জাহেলরা মনমতো আরো বিবাহের কুব্যবস্থা বানিয়ে ফেলেছিলো!
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী (كتاب النكاح)
হাদিস নম্বরঃ ৪৭৫১
৪৭৫১। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান ও আহমদ ইবনু সালিহ্ (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিবাহ করবে।দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ঋতু থেকে মুক্ত হওয়ার পর এই কথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যাক্তির কাছে যাও এবং তার সাথে যৌন মিলন কর। এরপর তার স্বামী নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও এক বিছানায় ঘুমাত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যাক্তির দ্বারা গর্ভবতী হত, যার সাথে স্ত্রীর যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টবাবে প্রকাশ হত তখন ইচ্ছা করলে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করত। এটা ছিল তার স্বামীর অভ্যাস। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরণের বিবাহকে ‘নিকাহুল ইস্তিবদা’ বলা হত।
তৃতীয় প্রথা ছিল যে, দশ জনের কম কতিপয় ব্যাক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সাথে যৌনমিলনে লিপ্ত হত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, সেই মহিলা এ সকল ব্যাক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার সামনে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই জানো- তোমরা কি করেছ! এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমারই সন্তান। ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত, তখন এ ব্যাক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত এবং ঐ মহিলা তার স্ত্রীরূপে গণ্য হত।
চতুর্থ প্রকারের বিবাহ হচ্ছে, বহু পুরুষ একই মহিলার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার কাছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-শায়ী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল বারবনিতা (পতিতা), যার চিহ্ন হিসাবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছা করলে অবাধে এদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারত। যদি এ সকল মহিলাদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান প্রসব করত তাহলে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া সকল কাফাহ্ পুরুষ এবং একজন ‘কাফাহ্’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যারা সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত- অমুকের ঔরসজাত সন্তান) কে ডেকে আনা হত সে সন্তানটির যে লোকটি সাথে এ সা’দৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের হিসাবে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হল তখন তিনি জাহেলী যুগের সমস্ত বিবাহ প্রথাকে বাতিল করে দিলেন এবং বর্তমানে প্রচলিত শাদী ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিলেন।
বিয়েতে নারীদের মতামতের অনধিকার
অভিজাত শ্রেণিতেই নারীরা নিজের বিয়েতে “হ্যা”/” না” বলতে পারতো না। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো অভিভাবকের হাতে।[9]আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ ৫, জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
সাধারণ নারীদের কথা তো বহুদূর…!
অবৈধ বিবাহ ও সীমাহীন সীমালঙ্ঘন
দুই সহোদর বোনকে তারা(পুরুষরা) একই সাথে বিয়ে করত। পিতার তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী অথবা পিতার মৃত্যুর পর সন্তান তার সৎ মায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো। তালাকের উপর ছিল শুধুমাত্র পুরুষের একছত্র অধিকার। তাদের স্ত্রী গ্রহণ করার যেমন কোন সীমা ছিল না ( কেউ কেউ দশের অধিক বিয়ে করত), ঠিক তেমনি তাদের তালাকেরও কোন নির্দিষ্ট সীমা ছিল না। যখন খুশি যাকে বিয়ে করত, যখন খুশি যাকে তালাক দিত এতে কোন নারী কোন ধরণের আপত্তি তুলতে পারতো না। তারা কোন ধরণের বিচার চাইতে পারতো না তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে।[10]প্রাগুক্ত
নারীরা শুধুই ছিলো সম্পত্তি
কেউ মারা গেলে তার ওয়ারিশ সেই লোকের স্ত্রীরও ওয়ারিশ হয়ে যেতো।
আর নারীদের দেওয়া সম্পদ অর্থকড়িও জোর করে আত্মসাৎ করা হতো!
এই প্রথা নিষিদ্ধ করে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।”[11]কুরআন ৪ঃ১৯
এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর প্রচুর হাদিস এনেছেন।
তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে কিছু অংশঃ
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর (كتاب التفسير)
হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৯
৬৫/৪/৬. পরিচ্ছেদ নাই।
৪৫৭৯. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًا ط وَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَآ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ -ইসলামের প্রথম যুগে অবস্থা এমন ছিল যে, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার অভিভাবকগণ তার স্ত্রীর মালিক হয়ে বসত। তারা ইচ্ছা করলে নিজেরা ঐ মহিলাকে বিয়ে করত। ইচ্ছা করলে অন্যের কাছে দিত। কিংবা তাকে মৃত্যু পর্যন্ত আটকে রাখত। কারও কাছে বিয়ে দিত না। মহিলার পরিবারের চেয়ে এরা অধিক হকদার হয়ে বসত। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হল। [৬৯৪৮] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২২১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সাথে সহিহুল বুখারী (তাওহিদ) ৬৯৪৮ নং হাদিসও দেখতে পারেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে,
মানুষ ঐ স্ত্রীলোকটিকে বাধ্য করতো যে, সে যেন মোহরের দাবী পরিত্যাগ করে কিংবা সে যেন আর বিয়েই করে। এও বর্ণিত আছে যে, কোন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে একটি লোক এসে ঐ স্ত্রীর উপর একখানা কাপড় নিক্ষেপ করতো এবং ঐ লোকটিকেই ঐ স্ত্রীলোকটির দাবীদার মনে করা হতো। এটাও বর্ণিত আছে যে, ঐ স্ত্রীলোকটি সুন্দরী হলে ঐ কাপড় নিক্ষেপকারী ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে নিতে এবং বিশ্রী হলে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে বিধবা অবস্থাতেই রেখে দিতো। অতঃপর সে তার উত্তরাধকারী হয়ে যেতো। এও বর্ণিত আছে যে, ঐ মৃত ব্যক্তির অন্তরঙ্গ বন্ধু ঐ স্ত্রীর উপর কাপড় নিক্ষেপ করতো। অতঃপর ঐ স্ত্রী তাকে কিছু মুক্তিপণ বা বিনিময় প্রদান করলে সে তাকে বিয়ে করার অনুমতি দিতো, নচেৎ সে আজীবন বিধবাই থেকে যেতো।
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন, মদীনাবাসীদের প্রথা ছিল এই যে, কোন লোক মারা গেলে যে ব্যক্তি তার মালের উত্তরাধিকারী হতে সে তার স্ত্রীরও উত্তরাধিকারী হতো। তারা স্ত্রীলোকদের সাথে অত্যন্ত জঘন্য ব্যবহার করতো। এমনকি তালাক প্রদানের সময়েও তাদের সাথে শর্ত করতো যে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমত তাদের বিয়ে দেবে। এ প্রকারের বন্দীত্ব হতে মুক্ত হওয়ার এ পন্থা বের করা হয়েছিল যে, ঐ নারীগণ ঐ পুরুষ লোকদেরকে মুক্তিপণ স্বরূপ কিছু প্রদান করতো। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে এটা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, আবু কায়েস ইবনে। আসলাত মারা গেলে তার পুত্র অজ্ঞতা যুগের প্রথা অনুযায়ী তার স্ত্রীকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত আতা (রঃ) বলেন যে, অজ্ঞতার যুগে মানুষ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে কোন একটি শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে দিতো। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যখন কোন লোক মারা যেতো তখন তার পুত্রকেই তার স্ত্রীর বেশী হকদার মনে করা হতো। সে ইচ্ছে করলে নিজেই তার বিমাতাকে বিয়ে করতো বা ইচ্ছেমত ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র কিংবা অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতো।
হযরত ইকরামা (রঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, আবু কায়েসের ঐ স্ত্রীর নাম ছিল উম্মে কাবীশাহ (রাঃ)। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ঐ সংবাদ প্রদান করে বলেন, এ লোকগুলো না আমাকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গণ্য করে আমার স্বামীর মীরাস প্রদান করছে, না আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে যে আমি অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি। সে সময় এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, কাপড় নিক্ষেপের পূর্বেই যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী পালিয়ে গিয়ে তার পিত্রালয়ে চলে যেতো তবে সে মুক্তি পেয়ে যেতো।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যার নিকট কোন পিতৃহীনা বালিকা থাকতো তাকে সে আটক রাখতো এ আশায় যে, তার স্ত্রী মারা গেলে সে তাকে বিয়ে করবে কিংবা তার পুত্রের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেবে। এসব কথার দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ আয়াত দ্বারা এসব কুপ্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং স্ত্রীলোকদেরকে এসব বিপদ হতে রক্ষা করা হয়েছে।
ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন, মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এ প্রথা চালু ছিল যে, কোন লোক কোন ভদ্র মহিলাকে বিয়ে করতো। অতঃপর তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতো। কিন্তু এ শর্ত করতো যে, স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া অন্য জায়গায় বিয়ে করতে পারবে না। ঐকথার উপর সাক্ষী নির্ধারণ করতে এবং চুক্তিপত্র লিখে নেয়া হতো। তখন কোন জায়গা হতে বিয়ের গয়গাম এলে স্ত্রী যদি সে বিয়েতে সম্মত হতো তবে তার পূর্ব স্বামী বলতো, তুমি যদি আমাকে এত টাকা দাও তবে তোমাকে বিয়ের অনুমতি প্রদান করবো। স্ত্রী সম্মত হলে তো ভালই, নচেৎ তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দেয়া হতো না। উদ্ধৃতি সমাপ্ত।[12]তাফসীরে ইবনে কাসীর
সীমাহীন তালাক্ব ও নারীদের দুর্ভোগ
কুরআন ২:২২৯ এর তাফসীর ইবনে কাসীরের বর্ণনা:
ইসলামের পূর্বে প্রথা ছিল এই যে, স্বামী যত ইচ্ছা স্ত্রীকে তালাক দিতো এবং ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিতো। ফলে স্ত্রীগণ সংকটপূর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল। স্বামী তাদেরকে তালাক দিতো এবং ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার নিকটবর্তী হতেই ফিরিয়ে নিতো। পুনরায় তালাক দিতো। কাজেই স্ত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। ইসলাম এই সীমা নির্ধারণ করে দেয় যে, এভাবে মাত্র দু’টি তালাক দিতে পারবে। তৃতীয় তালাকের পর ফিরিয়ে নেয়ার আর কোন অধিকার থাকবে না। সুনান-ই-আবু দাউদের মধ্যে এই অধ্যায় রয়েছে যে, তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া রহিত হয়ে গেছে।[13]তাফসীরে ইবনে কাসীর
(আবার অনেকে তালাক্ব না দিয়েই রেখে দিতো, স্ত্রীর কোনো দায় দায়িত্ব নিতো না! স্ত্রীর সাথে থাকতো না।)
দাসীদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো
আল্লাহ তা’আলা এ প্রথা বাতিল করে দেন,
“তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদের কামনায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”[14]কুরআন ২৪:৩৩
এ আয়াতের তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে,
অজ্ঞতা যুগের জঘন্য পন্থাসমূহের মধ্যে একটি পন্থা এও ছিল যে, তাদের দাসীরা যেন ব্যভিচার করে অর্থ উপার্জন করতঃ ঐ অর্থ মনিবদেরকে প্রদান করে এ কাজে তারা তাদেরকে বাধ্য করতো। ইসলাম এসে এই কু-প্রথার বিলুপ্তি সাধন করে।
বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাল্ল মুনাফিকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। সে এ কাজই করতো। তার দাসীর নাম ছিল মুআযাহ। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার নাম ছিল মুসাইকাহ। সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজে অস্বীকৃতি জানায়। অজ্ঞতার যুগে তার দ্বারা এ কাজ চলতো। এমনকি তার অবৈধ সন্তানাদিও জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজ করতে অস্বীকার করে। তখন ঐ মুনাফিক তার উপর জোর জবরদস্তি করে। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, বদরের এক কুরায়েশী বন্দী আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এর নিকট ছিল। সে তার দাসী মুআযার সাথে অবৈধভাবে মিলিত হতে চাচ্ছিল। কিন্তু মুআযা ইসলাম গ্রহণের কারণে এই অবৈধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এরও ইচ্ছা ছিল যে, তার ঐ দাসীটি যেন ঐ কুরায়েশী বন্দীর সাথে অবৈধভাবে মিলিত হয়। এ ব্যাপারে সে তার উপর জোর জবরদস্তি ও মারপিট করতো। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এটা মুসনাদে আবদির রাযযাকে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মুনাফিকদের এই নেতা তার ঐ দাসীটিকে তার অতিথিদের সেবার কার্যে পাঠিয়ে দিতে। দাসীটির ইসলাম গ্রহণের পর তাকে আবার এই কাজে পাঠাবার ইচ্ছা করলে সে প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার করে এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে তার এ বিপদের কথা বর্ণনা করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে এ খবর পৌছিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে নিষেধ করে দেন যে, সে যেন তার ঐ দাসীকে সেখানে না পাঠায়। ঐ মুনাফিক তখন জনগণের মধ্যে এই গুজব রটিয়ে দেয় যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তার দাসীকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন। তার ঐ কথার প্রতিবাদে এই আসমানী হুকুম নাযিল হয়।
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫৬। তাফসীর (كتاب التفسير)
হাদিস নম্বরঃ ৭৪৪৩
৩. মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না”
৭৪৪৩-(২৭/…) আবু কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর দু’জন বাদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু’জন বাদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাতো। তাই তারা এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করল। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “তোমাদের বাদীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে জোর-জবরদস্তি করবে না। আর যে তাদেরকে জোর জবরদস্তি করে তবে তাদের (বাদীদের) উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৭২, ইসলামিক সেন্টার ৭৩২৭)
এটা যে বলা হয়েছে যে, যদি এ দাসীরা সততা রক্ষা করার ইচ্ছা করে, এর দ্বারা ভাবার্থ এটা নেয়া চলবে না যে, যদি তাদের সততা রক্ষার ইচ্ছা না হয় তবে এতে কোন দোষ নেই। কেননা, ঐ সময় ঘটনা এটাই ছিল। এ জন্যেই এইরূপ বলা হয়েছে। এটা কোন সীমাবদ্ধতা ও শর্ত হিসেবে বলা হয়নি। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধন-সম্পদ লাভ করা। আর এ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে, তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ঐ সন্তানদেরকে তারা তাদের দাসদাসী হিসেবে ব্যবহার করবে। হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিংগা লাগানোর মজরী, ব্যভিচারের মজুরী এবং গণকের মজুরী গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। উদ্ধৃতি সমাপ্ত।[15]তাফসীরে ইবনে কাসীর
আপনি কি জানেন, এসব জাহেলী প্রথা এখনো ভারত উপমহাদেশের একটি ধর্মে সগৌরবে বিদ্যমান। বলুন তো, কোন ধর্ম?
শেষকথা
আল্লাহ তা’আলা আমাদের দিয়েছেন ইসলাম, দিয়েছেন সর্বকালে বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হাতিয়ার। আমরা যেন বাতিলের ছড়ানো বিভ্রান্তিতে পতিত না হই। কোনো সংশয়ে পড়লে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।[16]কুরআন ১৬:৪৩
Footnotes
⇧1 | সহিহুল বুখারী ৪৯১৩ তাওহীদ পাব্লিকেশন্স, ইফা ৪৫৪৮; সহিহুল মুসলিম ১৮/৫, হাঃ ১৪৭৯ |
---|---|
⇧2 | সূরা আন নাহল ৫৮,৫৯ এর তাফসীর ইবনে কাসীর |
⇧3 | নিম্নোক্ত হাদিসে ‘সেসময়’ বলতে ইসলামের প্রাথমিক যুগ বোঝানো হয়েছে, তখন আল্লাহ তা’আলা শুধুমাত্র অসিয়ত করার আয়াতটি নাজিল করেছিলেন। সেখানে কাকে কতভাগ দিতে হবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিলো না। গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৪৭/ অসিয়াত (كتاب الوصايا) হাদিস নম্বরঃ ২৫৬০ ১৭১১. ওয়ারিসের জন্য অসীয়াত নেই ২৫৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সেকালে) উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ মোতাবেক এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুন, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠামাংশ, স্ত্রীর জন্য (যদি সন্তান থাকে) এক অষ্টমাংশ, (না থাকলে) এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক, (থাকলে) এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন। হাদিসের মানঃ সহিহ |
⇧4 | সীরাতে সরওয়ারে আলম খণ্ড ১, পৃ ৯৬, আধুনিক প্রকাশনী |
⇧5 | কুরআন ৬ঃ১৩৯ |
⇧6, ⇧12, ⇧13, ⇧15 | তাফসীরে ইবনে কাসীর |
⇧7 | Robert Spencer, The Truth About Muhammad, p.34; (An Eagle Publishing Company, Washington, DC, 2006). |
⇧8 | আর রাহীকুল মাখতুম, জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি, পৃ ৫ |
⇧9 | আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ ৫, জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি |
⇧10 | প্রাগুক্ত |
⇧11 | কুরআন ৪ঃ১৯ |
⇧14 | কুরআন ২৪:৩৩ |
⇧16 | কুরআন ১৬:৪৩ |
এই নিয়মগুলো আবার চালু করা উচিৎ (শাহাবাগীদের জন্য)