ইতিহাস

গোমাংস বিতর্কঃ বর্তমান ও প্রাচীন ভারত

লেখাটা শুরু করা যাক বিহারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী এস কে সিংহের একটা উক্তি দিয়ে, তিনি ঘোষণা করেছিলেন,
“গরুর স্বাধীনতা প্রাপ্তিই হলো ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি।”
প্রথম কথা হলো কে কী খাবে, বা পড়বে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। এতে আমার বা কারো কোন মাথাব্যথা থাকতে পারে না বা নেই। কিন্তু সমস্যা তখন শুরু হয়, যখন শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতি।
যেমন গোলওয়ালকর লিখেছেন,

আমাদের দেশে কীভাবে গোহত্যা শুরু হল?
আমাদের দেশে বিদেশী আক্রমণকারীদের সঙ্গে তা এসেছিল। জনসাধারণকে দাসত্বের অধীন করার জন্য তারা ভেবেছিল যে হিন্দুদের স্ব-মর্যাদার প্রতিটি অবশেষকে নিশ্চিহ্ন করাই হবে। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। সেই অনুসারে গোহত্যা শুরু হল।[1]গোলওয়ালকর, এম এস, স্পটলাইট, ব্যাঙ্গালোর: সাহিত্য সিন্ধু, ১৯৭৪, পৃঃ ৯৮

গোলওয়ালকরের আগে দয়ানন্দ সরস্বতীও একই দাবি তুলেছেন,

আর্যদের শাসনকালে কোনও রকম গোহত্যা হত না বা অন্যান্য কাজে নিযুক্ত পশুদের হত্যা করা হত না। তখন মানুষ ও প্রাণীগুলি আর্যাবর্তে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুখে বাস করত। দুগ্ধ, ঘি, যাঁড় এবং অন্যান্য প্রাণী প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত এবং খাদ্যদ্রব্য যথেষ্ট পরিমাণে মিলত। যখন থেকে মাংসভোগী বিদেশীরা ভারতে এল এবং গোহত্যা, ইত্যাদি শুরু করল এবং শাসনব্যবস্থা মদ্যপানকারী কর্মচারীদের উপর ন্যস্ত হল, তখন থেকে আর্যদের দুরবস্থা ক্রমশ বর্ষিত হল।[2]কাউ প্রটেকশন ইন ইন্ডিয়াঃ ফ্রম সেকুলারাইজিং টু লেজিটিমাইজিং ডিবেটস, গুন্ডিমেড়া, সামবেইয়া ও অশ্বিন, ডি এস, সাউথ এশিয়া রিসার্চ, খণ্ড ৩৮, পৃ ১৫৬-১৭৬.

তাহলে দেখা যাচ্ছে গোমাংস বা গোহত্যার দায় সংঘ পরিবারের লোকজন সম্পূর্ণ বিদেশি অর্থাৎ মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ মুসলিমরা ভারতে আসার আগে এখানে গোহত্যা হতো না। ভারতের ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে ২১ টিতে গোমাংস নিষিদ্ধ আছে। আইনত অপরাধ। এই গোমাংসের জন্য গো-বলয় নামে বিখ্যাত রাজ্যগুলিতে কখনও গোমাংস খাওয়া, কখনও গোমাংস লুকিয়ে রাখা, কখনও বা গোহত্যা এবং গরু পাচারের অভিযোগে মুসলমান ও দলিত জনগণের উপর গোরক্ষা বাহিনীগুলির আক্রমণ, গণপিটুনি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
একটি হিসাবে ২০১২ সালের পর থেকে দেশে গরুর সঙ্গে জড়িত ১৩৩টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ৫০ জন নিহত হয়েছে, ২৯০ জন জখম হয়েছে। এর ৯৮ শতাংশ বা ১৩০টি ঘটনা ঘটেছে ২০১৪ সালের পর। – (১১.০৯.১৯, ইন্ডিয়াস্পেন্ড)
এবার দেখা যাক ইতিহাস কি বলে! গবেষকদের মত কি!
এবিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দের বহু উক্তি দেওয়া যায়, স্বামী বিবেকানন্দ ক্যালিফোর্নিয়াতে শেক্সপিয়ার ক্লাবে একটি ভাষণে বলেছেনঃ

You will be astonished if I tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. That is disgusting now.
আপনারা অবাক হয়ে যাবেন যদি আমি বলি যে প্রাচীন শাস্ত্রীয় মতে, যে গরু খেত না তাকে ভালো হিন্দু বলা হত না। কিছু কিছু অনুষ্ঠানে হিন্দুদের খাঁড় বলি দিতে হত এবং তারা তা খেত। এখন এটা বিরক্তিকর।[3]বিবেকানন্দ সমগ্র, খহ ৩, কলকাতা: অদ্বৈত আশ্রম, ১৯৯৭, পৃঃ ৫৩৬.; The Complete Works of Swami Vivekananda,Volume 3, Buddhistic India.

বিবেকানন্দকে সমর্থন করে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন লিখেছে,

বৈদিক আর্যরা, ব্রাহ্মণরা মাছ, মাংস, এমনকি গোমাংস খেত। কোনও বিশেষ অতিথিকে গোমাংস খাদ্য দিয়ে অভ্যর্থনা করা হত। যদিও বৈদিক আর্যরা গোমাংস খেতেন দুগ্ধবতী গাভীকে হত্যা করা হত না। বলিপ্রদত্ত গরুকে যে শব্দে সম্ভাষণ করা হত তার একটি হল অঘ্ন (যাকে হত্যা করা যেত না)। কিন্তু একটি অতিথি ছিলেন গোঘ্ন (যার জন্য গরু হত্যা করা যেত)। শুধুমাত্র ষাঁড়, বন্ধ্যা গরু ও বাছুর হত্যা করা হত।[4]সি কুনহন রাজা, ভেদিক কালচার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য সম্পাদনা, দ্য কালচারাল হেরিটেজ ইন ইন্ডিয়া, কলকাতাঃ রামকৃষ্ণ মিশন ১৯৯৩, পৃ ২১৭.

স্বামীজি আরো বলেন,

The Brahmins at one time ate beef and married Sudras. (A) calf was killed to please a guest. Sudras cooked for Brahmins.
ব্রাহ্মণেরা একসময় গোমাংস খেতেন এবং শূদ্রাকে বিয়ে করতেন। অতিথির সন্তুষ্টির জন্য একটি গোবৎসকে হত্যা করা হত। শূদ্রেরা ব্রাহ্মণদের জন্য রান্না করতো।[5]The Complete Works of Swami Vivekananda, Volume 9, Newspaper Reports, Part III: Indian Newspaper Reports, A Bengali Sadhu.

তিনি বলেন,

একসময় এই ভারতে গরু না খেলে কোনো ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণ থাকতে পারতেন না। আপনি বেদে পড়তে পারেন, কোনো বাড়িতে সন্ন্যাসী, রাজা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ লোক এলে সবচাইতে ভালো বৃষকে হত্যা করা হত। ধীরে ধীরে সকলে বুঝলেন যেহেতু আমরা কৃষিজীবি জাতি , তাই সেরা সেরা বৃষ হত্যা করা মানে জাতির বিনাশ করা। তাই এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায় এবং গোহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে।

Dr. John Henry Barrow বিশ্ব ধর্মসভার (১৮৯৩) সভাপতি ছিলেন। তিনি তার ‘Christian conquest of Asia’ নামক গ্রন্থে বিবেকানন্দের উপর মারাত্মক একটা অভিযোগ এনেছেন গোমাংস খাওয়া নিয়ে। এতে তিনি লিখেছেন,

I knew how common it was in Calcutta for young Brahmans to go to the Great Pastern Hotel and secretly indulge in a meat dinner. And I knew, also, that the Hindus are accustomed to kill the goat before the hideous idol of the goddess Kali, and that no rational argument could be offered which would make the goat loss sacred than the cow. . . . . . At the close of the first session of the Parliament of Religions, I invited the Swami Vivekananda and other Asiatics to go with me to the restaurant in the basement of the Art Building, and I said to the Swami: ‘What shall I give you to eat?’ and he answered : ‘Give me beef.’ ” This simple remark was a thunder-bolt out of a clear sky. It changed the aspect of the whole meeting, and there were no further remarks about meat-eating.[6]Dr. John Henry Barrow, Christian conquest of Asia , p 70-71.

উপরের Dr. John Henry Barrow-র বক্তব্যটা নিয়ে বিতর্ক আছে, সত্য না মিথ্যা সেটা বলা যায়না।
ডি এন ঝাঁ বলেছেন,

Vivekananda “vehemently defended his action”. According to Manishankar Mukhopahyay (Shankar), Vivekananda learned about these allegations, but as he was busy with his own mission and some other issues, he preferred to remain silent.[7]Dwijendra Narayan Jha,The Myth of the Holy Cow, p-145

ঐতিহাসিক ডি এন ঝাঁ ২০০৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য মিথ অব হোলি কাউ’ – এ গোমাংস খাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই বইটি রচনা করার কারণে তিনি মৃত্যুর হুমকি অব্দি পেয়েছিলেন। এছাড়াও এবিষয়ে রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও এইচ ডি সাংকালিয়া অনেকেই আলোচনা করেছেন।
ডি এন ঝাঁ লিখেন,

ঋগ্বেদে প্রায়শই বলদের মাংস রান্না করে দেবতাদের বিশেষত বৈদিক দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার উল্লেখ রয়েছে। এক স্থানে বলা হচ্ছে যে তিনি (ইন্দ্র) বলেছেন, “তারা আমার জন্য কুড়িটি অপেক্ষাও ১৫টি অধিক বলীবর্ণ রন্ধন করে”। অন্য কয়েকটি স্থানে বলা হয়েছে যে, “তিনি ষাঁড়ের মাংস এক বা একশো মহিষের মাসে, বা অগ্নিপক্ক ৩০০ মহিষ, অথবা এক হাজার মন্ত্রিব ভক্ষণ করেন।”.. অগ্নির সম্পর্কে ঋগবেদে বর্ণনা করা হয়েছে ‘যার খাদ্য হল বলদ ও বন্ধ্যা গাভী’[8]দ্য মিথ অব হোলি কাউ, ডি এন ঝাঁ, পৃঃ ৮

এরপর লিখেন,

…পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্টি বিধান ছাড়াও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিলো সমাজের সকলের জন্য আয়োজিত ভোজ, বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের জন্য, যাদের গোমাংসের প্রতি আগ্রহ শাস্ত্রে পরিষ্কার বলা আছে।[9]প্রাগুক্ত, পৃ ১০-১২

এরপর তিনি বিভিন্ন ঋষিদের উদাহরণ এনেছেন,

… মিথিলার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ঋষি যাজ্ঞবল্কের প্রিয় খাদ্য ছিল গোমাংস। বলা হয়, তিনি এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন যে ‘তিনি গরু ও ষাঁড়ের মাংস ভক্ষণ করবেন ততদিন, যতদিন তা নরম (অংসল) থাকবে’।[10]প্রাগুক্ত, পৃ ১৪

ঐতিহাসিক ডি এন ঝা মনুসংহিতা থেকে দেখিয়েছেন মনুও গোমাংসকে নিষিদ্ধ করেননি। তিনি বলেন,

গোমাংস ভক্ষণ মনুর সময়ের পর, অর্থাৎ, ২০০ খ্রিস্টাব্দের পরও প্রচলিত ছিল। যেমন, চরক (খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতক), সুশ্রুত (খ্রি. ৩য়-৪র্থ শতক) ও বাগভট্ট (খ্রি. ৭ম শতক) নানা ধরনের নাছ ও মাংসের এক চিত্তাকর্ষক তালিকা দিয়েছেন এবং এরা তিনজনেই রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে গোমাংসের ব্যবহার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন।[11]প্রাগুক্ত, পৃ ১৮

প্রবল ব্রাহ্মণ্যবাদী গুপ্তযুগে কালিদাস রন্তিদেবের কাহিনীর প্রসঙ্গ টেনেছেন, যিনি তাঁর রন্ধনশালায় দৈনিক অগণিত গরু হত্যা করতেন। তার পরেও গোহত্যা বা গোমাংস ভক্ষণে বিরতি পড়েনি। দুশো বছর পর ভবভূতি (৭০০ খ্রিস্টাব্দ) অতিথি সৎকারের দু’টি উদাহরণ দিয়েছেন, যেখানে একটি বাছুরকে হত্যা করা হয়েছিল। রাজশেখর (খ্রিস্টীয় ১০ম শতক) অতিথির সম্মানে একটি বলদ বা একটি ছাগল হত্যা করার রীতির উল্লেখ করেছেন এবং সোমদেব (খ্রিস্টীয় ১১শ শতক) সাতজন ব্রাহ্মণ বালকের গল্প বলেছেন যারা একটি গরু খেয়েছিল।
ঐতিহাসিক ডি এন ঝা সিদ্ধান্ত টেনেছেন যে,

“সংখ্যায় কম হলেও উপরিউক্ত নিদর্শনগুলি দেখিয়ে দেয় যে আনুমানিক দ্বাদশ শতক পর্যন্ত খাদ্যের জন্য পশুহত্যার প্রাচীন রীতি জারি ছিল।”

এমনকি পরের দিকের অনেক ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখক তা স্মরণ করেছেন। যেমন, গুজরাতের চাণ্ডুপণ্ডিত (১৩শ শতকের শেষভাগ), অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানার নরহরি (১৪শ শতক) এবং মল্লিনাথ (১৪শ-১৫শ শতক), যিনি বিদ্যানগরের (বিজয়নগর) রাজা দ্বিতীয় দেবরায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রাচীনকালে আচার অনুষ্ঠান তথা খাদ্যের জন্য গো-নিধন করা হত। অনেক পরে ১৮শ শতকে তাঞ্জোরের জনৈক মন্ত্রী ঘনশ্যাম বলেছেন যে,

‘অতিথির সম্মানে গোহত্যা একটি প্রাচীন বিধি।[12]প্রাগুক্ত, পৃ ১৮

ডাঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের প্রণীত ‘Beef in Ancient’ ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘জাতি গঠনে বাধা’ গ্রন্থে বৌদ্ধযুগের আগে হিন্দুরা যে প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করত, তার উল্লেখ আছে। এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে গোহত্যা ও গোমাংস ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গোমাংস না খাওয়ালে তখনকার সময়ে অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ণ থেকে যেত। সেই কারণেই অতিথির আরেক নাম ‘গোঘ্ন’[13]An account of the Vedas : with numerous extracts from the Rig-Veda. The Atharva-veda described : with a classified selection of hymns, explanatory notes and review. The Brahmanas of the Vedas by Macdonald, Kenneth Somerled, page 26
রামপ্রসাদের গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তাঁর ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’ গ্রন্থে অষ্টবিধ মহামাংসের মধ্যে গোমাংসের উল্লেখ প্রথমেই আছে।
শ্রাদ্ধে পিতৃপুরুষকে তৃপ্ত করতে যে গোমাংস দেওয়া হত তারও উল্লেখ আছে। এ বিষয়ে আরও জানতে ‘ভারতরত্ন’ পণ্ডিত পাণ্ডুরঙ্গ কাণের ‘History of Dharmasastra’ পড়ে দেখতে পারেন।
আম্বেদকরও বৈদিক সাহিত্য উল্লেখ করে দেখিয়েছেন, যে প্রাচীন কালে গোহত্যা করার রীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিলো, তাঁর মতে,

ব্রাহ্মণরা গোমাংস ভক্ষণ করা বন্ধ করা সত্ত্বেও দলিতরা তা অক্ষুণ্ণ রাখার ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ দলিতদের অস্পৃশ্য করে তুললো।

তিনি আরো বলেন,

অব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণদের অনুকরণ করে গোমাংস খাওয়া ত্যাগ করে।[14]Why Brahmins Gave Up Beef Eating

ব্রাহ্মণরা কেন গোমাংস খাওয়া বন্ধ করলো এবিষয়ে বাবাসাহেব আম্বেদকার বলেন,

বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা তাঁর মূর্তিস্থাপন ও স্তূপ তৈরি করতে আরম্ভ করে। ব্রাহ্মণরাও তাঁদের অনুসরণ করতে শুরু করল। তাঁরা মন্দির তৈরি করতে শুরু করল এবং তার মধ্যে শিব, বিষ্ণু, রাম ও কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করতে থাকল। এইভাবে তাঁরা বৌদ্ধমূর্তির ভক্তদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। পূর্বে হিন্দুদের কোনো মন্দির বা দেবদেবীর মূর্তি ছিল না। বৌদ্ধদের অনুকরণে ব্রাহ্মণরা এগুলি শুরু করল। বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণ্যধর্মের যজ্ঞ এবং গোহত্যা পরিত্যাগ করেছিল। কারণ গোরু ছিল জনগণের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাণী। জনসাধারণ ব্রাহ্মণদের প্রবলভাবে ঘৃণা করতে থাকে। … বৌদ্ধধর্মের প্লাবন থেকে আত্মরক্ষার জন্য ব্রাহ্মণদের যজ্ঞ এবং গোহত্যা দুটি রীতিকেই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করল। .. ব্রাহ্মণদের গোমাংস খাওয়া বন্ধ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ সমাজে যেরূপ সম্মান লাভ করেছিল সেটা যাতে পেতে পারে।[15]প্রাগুক্ত

স্বামী বিবেকানন্দ অবশ্য এই গোহত্যা বা গোমাংস ভক্ষণ বন্ধের অর্থনৈতিক কারণের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। তাঁর মতে,

কালক্রমে দেখা গেল যে আমরা যেহেতু কৃষিজীবী জাতি, অতএব সবচেয়ে ভালো ষাঁড়গুলিকে মেরে ফেলা জাতিকে হত্যা করারই সমার্থক। সুতরাং, এই সব প্রথা বন্ধ করা হল এবং গো-হত্যার বিরুদ্ধে একটি মত গড়ে উঠল।

একটা আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে সংঘ পরিবারের আদর্শ সাভারকার গরু সম্পর্কে বলেছেন,

কোন বস্তু খাদ্য কি অখাদ্য নির্ধারিত হয় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় কি-না তা দিয়ে। তার উপর ধর্মীয় মর্যাদা আরোপ করা হলো তাকে ঐশ্বরিক করে তোলা। এই ধরনের কুসংস্কারপূর্ণ মানসিকতা দেশের বুদ্ধিবৃত্তিকে ধ্বংস করে।[16]সাভারকার সমগ্র বঙমায়া, খণ্ড ২,পৃ ৫৫৯

আরো বলেন,

যখন মানবিক স্বার্থ চরিতার্থ না হয়, এবং বস্তুত তা যদি গরুর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যখন মানবতাবাদ লজ্জিত হয় তখন স্ব পরাজয়কারী চূড়ান্তকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।[17]ঐ পৃ ৩৪১

[স্বামী বিবেকানন্দের উক্তিগুলো এই লিংকেDr. John Henry Barrow-এর বই এই লিংকে]

 

    Footnotes

    Footnotes
    1গোলওয়ালকর, এম এস, স্পটলাইট, ব্যাঙ্গালোর: সাহিত্য সিন্ধু, ১৯৭৪, পৃঃ ৯৮
    2কাউ প্রটেকশন ইন ইন্ডিয়াঃ ফ্রম সেকুলারাইজিং টু লেজিটিমাইজিং ডিবেটস, গুন্ডিমেড়া, সামবেইয়া ও অশ্বিন, ডি এস, সাউথ এশিয়া রিসার্চ, খণ্ড ৩৮, পৃ ১৫৬-১৭৬.
    3বিবেকানন্দ সমগ্র, খহ ৩, কলকাতা: অদ্বৈত আশ্রম, ১৯৯৭, পৃঃ ৫৩৬.; The Complete Works of Swami Vivekananda,Volume 3, Buddhistic India.
    4সি কুনহন রাজা, ভেদিক কালচার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য সম্পাদনা, দ্য কালচারাল হেরিটেজ ইন ইন্ডিয়া, কলকাতাঃ রামকৃষ্ণ মিশন ১৯৯৩, পৃ ২১৭.
    5The Complete Works of Swami Vivekananda, Volume 9, Newspaper Reports, Part III: Indian Newspaper Reports, A Bengali Sadhu.
    6Dr. John Henry Barrow, Christian conquest of Asia , p 70-71.
    7Dwijendra Narayan Jha,The Myth of the Holy Cow, p-145
    8দ্য মিথ অব হোলি কাউ, ডি এন ঝাঁ, পৃঃ ৮
    9প্রাগুক্ত, পৃ ১০-১২
    10প্রাগুক্ত, পৃ ১৪
    11, 12প্রাগুক্ত, পৃ ১৮
    13An account of the Vedas : with numerous extracts from the Rig-Veda. The Atharva-veda described : with a classified selection of hymns, explanatory notes and review. The Brahmanas of the Vedas by Macdonald, Kenneth Somerled, page 26
    14Why Brahmins Gave Up Beef Eating
    15প্রাগুক্ত
    16সাভারকার সমগ্র বঙমায়া, খণ্ড ২,পৃ ৫৫৯
    17ঐ পৃ ৩৪১
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    0 Comments
    Oldest
    Newest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button