কুরআন ও বাইবেলের আলোকে খ্রিস্টানদের আকিদা

কুরআন ও বাইবেলের আলোকে খ্রিস্টানদের আকিদা সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। খ্রিস্টানদের প্রচলিত ১০টি আকিদাকে সামনে রেখে আমরা এই আর্টিক্যালটিকে সাজিয়েছি। এই লিখায় সেই ১০টি বিষয়ে খ্রিস্টানদের বাইবেলের প্রচলিত আকিদা, কোরআনের আকিদা, বাইবেলের বৈপরিত্যপূর্ণ আকিদা গুলো জানব।
ঈসাকে আল্লাহ দাবি
আমরা মুসলিমরা বলি ঈসা (আঃ) ঈশ্বর নন। কারন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ﷻ বলেছেন,
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’। অথচ মাসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।[1]সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৭২; আল বায়ান
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে যারা বলে ‘নিশ্চয় মারইয়াম পুত্র মাসীহই আল্লাহ’। বল, যদি আল্লাহ ধ্বংস করতে চান মারইয়াম পুত্র মাসীহকে ও তার মাকে এবং যমীনে যারা আছে তাদের সকলকে ‘তাহলে কে আল্লাহর বিপক্ষে কোন কিছুর ক্ষমতা রাখে? আর আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের মধ্যবর্তী যা রয়েছে, তার রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[2]সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১৭; আল বায়ান
কিন্তু খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে অন্য কিছু। তারা ঈসা (আঃ) কে ঈশ্বর দাবি করে বিভিন্ন প্রমান পেশ করে থাকে,
“এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য আল্লাহ্র হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান”[3]কলসীয় 1:15; MBCL
“সেই কথা হল, যদি তুমি ঈসাকে প্রভু বলে মুখে স্বীকার কর এবং দিলে ঈমান আন যে, আল্লাহ্ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন তবেই তুমি নাজাত পাবে”[4]রোমীয় 10:9; MBCL https://bible.com/bible/95/rom.10.9.MBCL
এই কলসীয় ও রোমীয় হল সাদু পৌলের লিখা পত্র। এখন সবারই জানা যে সাদু পৌল কোন ঈসা (আঃ) এর সঙ্গী বা সাহাবি ছিল না, আর উপর্যুক্ত বাণীটিও ঈসা (আঃ) এর নিজের বা তার কোন সাহাবীর নয়। তারপরও এটা নিয়ে কিভাবে, কিসের ভিত্তিতে তারা প্রমান পেশ করে আমার জানা নেই।
অথচ আল্লাহ বার বার বলেছেন, ঈসা ঈশ্বর নন,
আর আল্লাহ যখন বলবেন, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে, ‘আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য সম্ভব নয়। যদি আমি তা বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনি জানেন, আর আপনার অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহে সর্বজ্ঞাত’।[5]সূরা মায়েদা আয়াত ১১৬; আল বায়ান
ঠিক একই ধরনের কথা বাইবেলের মতে ঈসা (আঃ) বলেন-
“যারা আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে, তারা সবাই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না; কিন্তু যে আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করবে, সেই প্রবেশ করতে পারবে। সেদিন, অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু, প্রভু; আমরা কি আপনার নামে ভবিষ্যদ্বাণী করিনি? আপনার নামে কি ভূত তাড়াইনি ও বহু অলৌকিক কাজ করিনি?’ তখন আমি তাদের স্পষ্ট বলব, ‘আমি তোমাদের কোনোকালেও জানতাম না। দুষ্টের দল, আমার সামনে থেকে দূর হও!’[6]মথি 7:21-23 BCV
https://bible.com/bible/2412/mat.7.21-23.BCV
খ্রিস্টানদের ঈসা (আঃ)-কে ঈশ্বর বলার বিষয়কেত খোদ বাইবেলের ঈসা (আঃ)-ই খন্ডন করে গিয়েছেন। বাইবেল মতে তিনি বলেন যে,
ঈসা বললেন, “আপনাদের শরীয়তে কি লেখা নেই যে, ‘আমি বললাম, তোমরা যেন আল্লাহ্’? আল্লাহ্র কালাম যাদের কাছে এসেছিল তাদের তো তিনি আল্লাহ্র মত বলেছিলেন। পাক-কিতাবের কথা কি বাদ দেওয়া যেতে পারে? পারে না।[7]যোহন 10/34, 35; MBCL
ঈসা (আঃ)কে ঈশ্বর প্রমান করার অপচেষ্টাগুলোর খন্ডন নিয়ে আমাদের এই লিখাটি পড়ে দেখতে পারে
ঈসাকে আল্লাহর পুত্র দাবি
বাইবেলের বিভিন্ন আয়াত ও অন্যান্য শ্লোক যেখানে বলা হয়েছে ‘ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র’ বা ‘আল্লাহ ঈসা (আঃ) এর পিতা’ সেইগুলো দেখিয়ে খ্রিস্টানরা দাবি করে যে ঈসা (আঃ) নাকি বাস্তবেই আল্লাহর পুত্র ছিলেন। যাই হোক এই আকিদারও সরূপ উন্মোচন করব।
কোরআনে আল্লাহ ﷻ বলেছেন,
আর ইয়াহূদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে, মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা, তারা সেসব লোকের কথার অনুরূপ বলছে যারা ইতঃপূর্বে কুফরী করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন, কোথায় ফেরানো হচ্ছে এদেরকে?[8]সূরা আত তাওবাহ আয়াত ৩০; আল বায়ান
বাইবেলে বলা হয়েছে,
শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে। তিনি মহান হবেন। তাঁকে আল্লাহ্তা’লার পুত্র বলা হবে। মাবুদ আল্লাহ্ তাঁর পূর্বপুরুষ বাদশাহ্ দাউদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন। তিনি ইয়াকুবের বংশের লোকদের উপরে চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।” … পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ইব্নুল্লাহ্ বলা হবে।[9]লূক 1:31-35; MBCL https://bible.com/bible/95/luk.1.31-32.MBCL
কোরআনে যেমন বলা হয়েছে মানুষ যে ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে তা নিতান্তই মানুষের মুখের কথা, যা বাস্তবতায় সত্য নয়। ঠিক তেমনই বাইবেলেও বলা হয়েছে, যে পুত্র জন্মাবে তাকে আল্লাহর পুত্র বলা হবে বা বলা যাবে, যা নিতান্তই কথার কথা ছাড়া আর কিছুই না, এটা আক্ষরীক অর্থে নয়। ঈসা (আঃ) যে আল্লাহর পুত্র তা শুধুই মুখের কথা অর্থাৎ ঈসা (আঃ) আক্ষরীক বা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর পুত্র নন, কিন্তু তারপরও তাকে আল্লাহর পুত্র বলা হয়েছে।
ঈসা (আঃ) যে বাস্তবে আল্লাহর পুত্র না বরং তাকে শুধু মুখেই আল্লাহর পুত্র বলা হয়েছে, এই মতটা আরো বেশি শক্তিশালি হয়ে যায় যখন আমরা বাইবেলে অন্য রেফারেন্সগুলো দেখি। বাইবেলে বহু যায়গায় বহুজনকে আল্লাহর পুত্র বলা হয়েছে, যেমন বিভিন্ন নবী ও বিভিন্ন রাজাকে, ফেরেশতাদেরকে, কয়েক স্থানে সকল বনি-ইসরাইলইকে, কয়েক যায়গায় সব মানবপুত্রকে আল্লাহর পুত্র বলা হয়েছে।[10]রোমীয় ৮/১৪-১৯; লূক ৩/৩৮; যাত্রা পুস্তক ৪/২২-২৩; যিরমিয় ৩১/৯; গীতসংহিতা ২/৭, ৮২/৬, ৮৯/২৭; ২ শমূয়েল ১১/১, ৭/১৪; ১ বংশাবলী, ২২/১০, ২৮/৬; পিতর ১/৩-৬; মথি ৫/৯, ৬/৯, ২৩/৯; দ্বিতীয় … See Full Note এসব থেকেই বুঝা যায় যে ঈশ্বরের পুত্র বলাটা শুধুই তাদের মুখের কথা।
খ্রিস্টানরা নিজেকে আল্লাহর পুত্র দাবি করে
আমি বলেছিলাম, “তোমরা যেন আল্লাহ্, তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা’লার সন্তান।[11]গীতসংহিতা 82:6; MBCL https://www.bible.com/bible/95/PSA.82.6.MBCL
খ্রিস্টানরা নিজেকে আল্লাহর পুত্র মনে করে, আবার ঈসা (আঃ)-কেও আলাদা করে আল্লাহর পুত্র বলে। তাদের আকিদার আগামাথা সব গোজামিলে ভরপুর বলা যায়। যদিও এটা কমন সেন্সের বিষয় যে এই পুত্র আপন পুত্রের মত বাস্তব অর্থে ব্যবহৃত হয় নি, বরং রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। তারপরও নিজেকে ও ঈসা (আঃ)-কে ঈশ্বর বা আল্লাহরপুত্র বানানোর অপচেষ্টাগুলোর অভাব নেই, সেই সংক্রান্ত আমাদের একটি লিখা পড়ে দেখতে পারেন।
কিন্তু মুসলিমরা রূপক অর্থেও নিজেকে আল্লাহর পুত্র মনে করে না, বরং আমরা মনে করি আমরা আল্লাহর বান্দা, গোলাম। মানুষ যে আল্লাহর পুত্র না সেই বিষয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেন,
ইয়াহূদী ও নাসারারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়জন’। বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপের কারণে আযাব দেন? বরং তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত মানুষ, যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা আযাব দেন। আর আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যবর্তী যা আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহর এবং তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন’।[12]সূরা আল মায়েদাহ, আয়াদ ১৮; আল বায়ান
তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। কিভাবে তার সন্তান হবে অথচ তার কোন সঙ্গিনী নেই! আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে সর্বজ্ঞ।[13]সূরা আল আনআম, আয়াত ১০১; আল বায়ান
ত্রিত্ববাদ
For there are three that bear record in heaven, the Father, the Word(Son) and the Holy Ghost: and these three are one. [14]1 John 5:7 KJV https://bible.com/bible/1/1jn.5.7.KJV
অনুবাদ: কারণ স্বর্গের সাক্ষ্য বহনকারী তিনজন আছে, পিতা (ঈশ্বর), বাক্য (পুত্র) এবং পবিত্র আত্মা; এবং এই তিনজন এক।
প্রচলিত খ্রিস্টানরা ট্রিনিটিতে বিশ্বাসী। যদিও এর বিপক্ষে অনেক দলিল ও প্রমান রয়েছে, তারপরও খ্রিস্টানদের মেজরিটি এই ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী ও এর পক্ষে অনেক দলিলও পেশ করে তারা। কিন্তু আমরা মুসলিমরা এই আকিদায় বিশ্বাসী না। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই, ঈসা (আঃ) উনার পুত্র নন বরং মনোনিত নবী ও রাসূল। আল্লাহ কোরআনে এই ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে বলেন,
হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।[15]সূরা আন নিসা আয়াত ১৭১; আল বায়ান
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে।[16]সূরা মায়েদা আয়াত ৭৩
ঈসা (আঃ) নাকি ক্রুশে মারা গেছে
খ্রিস্টানদের প্রচলিত বিশ্বাস, বাইবেলে বলা হয়েছে,
ইহুদীরা প্রভু ঈসাকে এবং নবীদেরকে হত্যা করেছিল, আবার আমাদেরকেও নির্যাতন করেছিল; তারা আল্লাহ্কে অসন্তুষ্ট করে এবং তারা সকল মানুষেরও বিরুদ্ধে থাকে।[17]1 থিষলনীকীয় 2:15; BACIB
ঈসা (আঃ)-কে ক্রশ বিদ্ধ করে মারা হয়েছিল।[18]যোহন 19, মথি 27, মার্ক 15, লুক 23
অথচ ঈসাকে হত্যা করা হয়নি, কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
এবং তাদের এ কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।[19]সূরা আন নিসা আয়াত ১৫৭; আল বায়ান
এই বিষয়ে প্রচলিত দাবি ও প্রমানের বিপরীতে অনেকটা কোরআনের মত একই ধরনের কথা বাইবেলে বলা আছে যে,
In the days of his flesh, Jesus offered up prayers and supplications, with loud cries and tears, to him who was able to save him from death, and he was heard for his godly fear.[20]Hebrews 5:7 RSV
https://bible.com/bible/2020/heb.5.7.RSVতাঁর দেহের দিনগুলিতে, যীশু তাঁর কাছে উচ্চস্বরে কান্না এবং কান্নার সাথে প্রার্থনা এবং প্রার্থনা করেছিলেন, যিনি তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাঁর ঈশ্বরীয় ভয়ের জন্য তাঁর কথা শোনা হয়েছিল।
এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের এই লিখাটি পড়তে পারেন,
ঈসা (আঃ) নাকি সবার পাপ নিয়ে মারা গেছে
খ্রিস্টানদের প্রচলিত দাবি,
“তিনি গুনাহ্ করেন নি, তার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নি”। তিনি অপমানিত হলে প্রতিউত্তরে অপমান করতেন না; দুঃখভোগের সময় প্রতিশোধ নেবার ভয়ও দেখান নি, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁর উপর আস্থা রাখতেন। তিনি নিজের দেহে আমাদের সমস্ত গুনাহ্ ক্রুশের উপরে বহন করলেন, যেন আমরা গুনাহ্র পক্ষে মৃত্যুবরণ করে ধার্মিকতার পক্ষে জীবিত হই; তাঁরই ক্ষত দ্বারা তোমরা সুস্থতা লাভ করেছ।”[21]1 পিতর 2:22-24; BACIB https://bible.com/bible/809/1pe.2.22-24.BACIB
কারণ এ আমার রক্ত যা অনেকের গুনাহের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য আল্লাহ্র নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে।[22]মথি 26:28; MBCL
কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
আর যে ব্যক্তি কোন অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।[23]সূরা আন নিসা আয়াত ১১২; আল বায়ান
এছাড়াও বহু যায়গায় আল্লাহ বলেছেন “যে কেউ অন্য কারো পাপের বোঝা বইবে না, সবাই নিজের পাপের শাস্তিই পারে।”[24]সূরা ফাতির ১৮; আন-নাজম ৩৮; আনকাবুত ১৩; আন নাহাল ২৫; সূরা বনী ইসরাঈল ১৫; সূরা আন‘আম ১৬৪; সূরা বাকারাহ ১৩৪; সুরা হাজ্জ্ব ৩৭
বাইবেলে আবার বিপরীত বক্তব্য পাওয়া যায়, পাপ করলে সাজা পাবে, ঈসা (আঃ) পাপ বহনের কোন মূল্য নেই, কারন স্বয়ং বাইবেলমতে ঈসা (আঃ) বলেন-
যারা ভীরু, অবিশ্বাসী, ঘৃণার যোগ্য, নরহন্তা, পতিতাগামী, মায়াবী, মূর্তিপূজক তাদের এবং সমস্ত মিথ্যাবাদীর স্থান হবে আগুন ও গন্ধকে জ্বলন্ত হ্রদে; এটিই দ্বিতীয় মৃত্যু।[25]প্রকাশিত কালাম 21:8; BACIB https://bible.com/bible/809/rev.21.8.BACIB
এমন আরো অনেক বিপরীত বক্তব্য বা দলিল রয়েছে পাপ বহন করার বিপরীতে।[26]ঈসা (আঃ) পাপ বহন করবেন, না সকল পাপের শাস্তি হবে
খ্রিস্টানরা নিজেকে জান্নাতি ভাবে
ঈসা তাকে বললেন, “যদি তুমি পুরোপুরি খাঁটি হতে চাও তবে গিয়ে তোমার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে গরীবদের দান কর। তাতে তুমি বেহেশতে ধন পাবে। তারপর এসে আমার উম্মত হও।[27]মথি 19:21; MBCL
খ্রিস্টানদের দাবি শুধু খ্রিস্টানরাই স্বর্গে যাবে এবং যেই খ্রিস্টান হবে সেই জান্নাতি। কিন্তু তাদের এই দাবির পক্ষে শক্তিশালি ও সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই। তাই কোরআনে আল্লাহ ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বলেছেন,
আর তারা বলে, ইয়াহূদী কিংবা নাসারা ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা। বল, ‘তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’।[28]সূরা আল বাকারা আয়াত ১১১; আল বায়ান
বাইবেলে পুরাতন নিয়ম বা নতুন নিয়মের কোথাও বলা হয় নি যে খ্রিস্টান বা ইহুদি ছাড়া আর কেউ জান্নাত পাবে না বা খ্রিস্টান হলেই জান্নাত নিশ্চিত এমনটাও কোথাও সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে খ্রিস্টান হওয়ার পর বিধি বিধানও মানতে হবে, না মানলে জাহান্নামি।[29]ঈসা (আঃ) পাপ বহন করবেন, না সকল পাপের শাস্তি হবে
বাইবেলের উল্টো বাঁশ,
যারা ভীরু, অবিশ্বাসী, ঘৃণার যোগ্য, নরহন্তা, পতিতাগামী, মায়াবী, মূর্তিপূজক তাদের এবং সমস্ত মিথ্যাবাদীর স্থান হবে আগুন ও গন্ধকে জ্বলন্ত হ্রদে; এটিই দ্বিতীয় মৃত্যু।[30]প্রকাশিত কালাম 21:8; BACIB https://bible.com/bible/809/rev.21.8.BACIB
মিথ্যাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম প্রচার
কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,
আর ইয়াহূদী ও নাসারারা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ কর। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’ আর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তার পর, তাহলে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।[31]সূরা আল বাকারা আয়াত ১২০
আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশত (তারা এরূপ করে থাকে)। সুতরাং তোমরা ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[32]সূরা আল বাকারা আয়াত ১০৯; আল বায়ান
এই কাজটাই বর্তমানে খ্রিস্টানরা করে আসলে, তাইত মুসলিম বিশ্বে ইসায়ী মুসলিম নামক খ্রিস্টান মিসনারীদের মত প্রতারকদেরকে দেখা যাচ্ছে। তারা ধর্মপ্রচার করতে জঘন্য কৌশল অবলম্বন করছে, ছদ্মবেশ ধারন করছে, প্রচারক পল বলেন-
যদিও আমি কারও গোলাম নই তবুও আমি নিজেকে সকলের গোলাম করেছি, যেন অনেককে মসীহের জন্য জয় করতে পারি। ইহুদীদের জয় করবার জন্য আমি ইহুদীদের কাছে ইহুদীদের মত হয়েছি। যদিও আমি মূসার শরীয়তের অধীনে নই তবুও যারা শরীয়তের অধীনে আছে তাদের জয় করবার জন্য আমি তাদের মত হয়েছি। আবার শরীয়তের বাইরে যারা আছে তাদের জয় করবার জন্য আমি শরীয়তের বাইরে থাকা লোকের মত হয়েছি। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, আমি আল্লাহ্র দেওয়া শরীয়তের বাইরে আছি; আমি তো মসীহের শরীয়তের অধীনেই আছি। ঈমানে যারা দুর্বল তাদের কাছে আমি সেই রকম লোকের মতই হয়েছি, যেন মসীহের জন্য তাদের সম্পূর্ণভাবে জয় করতে পারি। মোট কথা, আমি সকলের কাছে সব কিছুই হয়েছি যেন যে কোন উপায়ে কিছু লোককে উদ্ধার করতে পারি। এই সব আমি সুসংবাদের জন্যই করছি যেন এর দোয়ার ভাগী হতে পারি।[33]1 করিন্থীয় 9:19-23; MBCL https://bible.com/bible/95/1co.9.19-23.MBCL
তাওরাত বিকৃত
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
সুতরাং তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নত দিয়েছি এবং তাদের অন্তরসমূহকে করেছি কঠোর। তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছে, তার একটি অংশ তারা ভুলে গিয়েছে এবং তুমি তাদের থেকে খিয়ানত সম্পর্কে অবগত হতে থাকবে, তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে যাও। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।[34]সূরা আল মায়েদাহ আয়াত ১৩; আল বায়ান
বাইবেলেও একই কথা বলা হয়েছে,
তোমরা কেমন করে বলতে পার, আমরা জ্ঞানী এবং আমাদের কাছে মাবুদের শরীয়ত (তাওরাত) আছে? দেখ, (ইহুদি) আলেমদের মিথ্যা-লেখনী তা মিথ্যা করে ফেলেছে।[35]ইয়ারমিয়া 8:8; BACIB https://bible.com/bible/809/jer.8.8.BACIB
এছাড়া তাওরাতের বিকৃতির আরো অনেক প্রমান পেয়ে যাবেন অনলাইনে বিভিন্ন লেখকদের লিখায়।
ইঞ্জিল বিকৃত
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’, আমি তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার একটি অংশ ভুলে গিয়েছে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা উসকে দিয়েছি এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন।[36]সূরা আল মায়েদাহ আয়াত ১৪; আল বায়ান
বাইবেলে বলা হয়েছে,
[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টের বিকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আরো অনেক প্রমান রয়েছে, এখানে শুধু উদাহরন সরূপ কয়েকটা উল্লেখ করা হয়েছে, চােইলে পড়তে পারেন[38]পূর্বের কিতাবগুলোকে অনুসরণ কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা খ্রিস্টধর্ম বিকৃতির এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ আল … See Full Note]“যারা এই কিতাবের ভবিষ্যদ্বাণীর সমস্ত কথা শোনে, তাদের প্রত্যেক জনের কাছে আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি, যদি কেউ এর সঙ্গে আর কিছু যোগ করে, তবে আল্লাহ্ সেই ব্যক্তিতে এই কিতাবে লেখা সমস্ত আঘাত যোগ করবেন; আর যদি কেউ এই ভবিষ্যদ্বাণীর কিতাবের কথা থেকে কিছু হরণ করে, তবে আল্লাহ্ এই কিতাবে লেখা জীবন-বৃক্ষ ও পবিত্র নগর থেকে তার অংশ হরণ করবেন। যিনি এসব কথার সাক্ষ্য দেন, তিনি বলছেন, সত্যি, আমি শীঘ্র আসছি। আমিন; প্রভু ঈসা, এসো।”[37]প্রকাশিত কালাম 22:18-20; BACIB https://bible.com/bible/809/rev.22.18-20.BACIB
সর্বশেষ এটাই বলব, আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি।[39]সূরা বাইয়্যেনাহ আয়াত ৬
সম্পাদনাঃ আশরাফুল নাফিজ
Footnotes
⇧1 | সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৭২; আল বায়ান |
---|---|
⇧2 | সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১৭; আল বায়ান |
⇧3 | কলসীয় 1:15; MBCL |
⇧4 | রোমীয় 10:9; MBCL https://bible.com/bible/95/rom.10.9.MBCL |
⇧5 | সূরা মায়েদা আয়াত ১১৬; আল বায়ান |
⇧6 | মথি 7:21-23 BCV https://bible.com/bible/2412/mat.7.21-23.BCV |
⇧7 | যোহন 10/34, 35; MBCL |
⇧8 | সূরা আত তাওবাহ আয়াত ৩০; আল বায়ান |
⇧9 | লূক 1:31-35; MBCL https://bible.com/bible/95/luk.1.31-32.MBCL |
⇧10 | রোমীয় ৮/১৪-১৯; লূক ৩/৩৮; যাত্রা পুস্তক ৪/২২-২৩; যিরমিয় ৩১/৯; গীতসংহিতা ২/৭, ৮২/৬, ৮৯/২৭; ২ শমূয়েল ১১/১, ৭/১৪; ১ বংশাবলী, ২২/১০, ২৮/৬; পিতর ১/৩-৬; মথি ৫/৯, ৬/৯, ২৩/৯; দ্বিতীয় বিবরণ ১৪/১, ৩২/১৯ |
⇧11 | গীতসংহিতা 82:6; MBCL https://www.bible.com/bible/95/PSA.82.6.MBCL |
⇧12 | সূরা আল মায়েদাহ, আয়াদ ১৮; আল বায়ান |
⇧13 | সূরা আল আনআম, আয়াত ১০১; আল বায়ান |
⇧14 | 1 John 5:7 KJV https://bible.com/bible/1/1jn.5.7.KJV |
⇧15 | সূরা আন নিসা আয়াত ১৭১; আল বায়ান |
⇧16 | সূরা মায়েদা আয়াত ৭৩ |
⇧17 | 1 থিষলনীকীয় 2:15; BACIB |
⇧18 | যোহন 19, মথি 27, মার্ক 15, লুক 23 |
⇧19 | সূরা আন নিসা আয়াত ১৫৭; আল বায়ান |
⇧20 | Hebrews 5:7 RSV https://bible.com/bible/2020/heb.5.7.RSV |
⇧21 | 1 পিতর 2:22-24; BACIB https://bible.com/bible/809/1pe.2.22-24.BACIB |
⇧22 | মথি 26:28; MBCL |
⇧23 | সূরা আন নিসা আয়াত ১১২; আল বায়ান |
⇧24 | সূরা ফাতির ১৮; আন-নাজম ৩৮; আনকাবুত ১৩; আন নাহাল ২৫; সূরা বনী ইসরাঈল ১৫; সূরা আন‘আম ১৬৪; সূরা বাকারাহ ১৩৪; সুরা হাজ্জ্ব ৩৭ |
⇧25, ⇧30 | প্রকাশিত কালাম 21:8; BACIB https://bible.com/bible/809/rev.21.8.BACIB |
⇧26, ⇧29 | ঈসা (আঃ) পাপ বহন করবেন, না সকল পাপের শাস্তি হবে |
⇧27 | মথি 19:21; MBCL |
⇧28 | সূরা আল বাকারা আয়াত ১১১; আল বায়ান |
⇧31 | সূরা আল বাকারা আয়াত ১২০ |
⇧32 | সূরা আল বাকারা আয়াত ১০৯; আল বায়ান |
⇧33 | 1 করিন্থীয় 9:19-23; MBCL https://bible.com/bible/95/1co.9.19-23.MBCL |
⇧34 | সূরা আল মায়েদাহ আয়াত ১৩; আল বায়ান |
⇧35 | ইয়ারমিয়া 8:8; BACIB https://bible.com/bible/809/jer.8.8.BACIB |
⇧36 | সূরা আল মায়েদাহ আয়াত ১৪; আল বায়ান |
⇧37 | প্রকাশিত কালাম 22:18-20; BACIB https://bible.com/bible/809/rev.22.18-20.BACIB |
⇧38 | পূর্বের কিতাবগুলোকে অনুসরণ কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা খ্রিস্টধর্ম বিকৃতির এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ |
⇧39 | সূরা বাইয়্যেনাহ আয়াত ৬ |