
কিছু ব্লগে নাস্তিক ও সনাতনীরা দাবি করেছে ইসলামে অমুসলিমদেরকে খাবার খাওয়ানো নিষিদ্ধ। দলিল হিসেবে উল্লেখ করে নিম্নোক্ত হাদিসটিঃ
“আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং আল্লাহভীরু মুত্তাকী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়।”[1]সুনানে আবু দাঊদ ৪৮৩২; রিয়াদুস সালেহীন ৩৭০; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৫৫৪, ৫৫৫, ৫৬০, ৫২৫; মিশকাত ৫০১৮; সহীহুল জামে’ ৭৩৪১; তিরমিজি ২৩৯৫; আলবানী (রহঃ) এবং বাঘাবী (রহঃ) … See Full Note
কিন্তু মজার কথা হলো অমুসলিমদেরকে খাবার খাওয়ানোর প্রমাণও হাদিসেই পাওয়া যায়:
“মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন (দারিমী, তিরমিযী)।”[2]আল আদাবুল মুফরাদ ১২৭, সহিহ মাউকুফ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=45442
এখন কথা হলো তাহলে ইসলামে কীভাবে অমুসলিমদেরকে খাবার খাওয়ানো নিষিদ্ধ করলো? আমাদের আলোচ্য হাদিসে কি তাই বলা হয়েছে? দেখে নেই আসুন।
আবু সুলাইমান আল খাত্তাবী (রহঃ) বলেছেন,
এটিতে অভাবীর খাদ্যদানের কথা আসে নি বরং নিমন্ত্রণ জানিয়ে খাবারের কথা এসেছে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
❝তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।❞ – [কুরআন, সূরা আল ইনসান ৭৬:৮]
এবং এটা জানা যায় যে তাদের বন্দীরা কাফের, অবিশ্বাসী, তবে তিনি অধার্মিক লোকদের সাহচর্য সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন, তাদের সাথে মেলামেশা ও খাওয়াদাওয়াকে [এর ব্যাপারে সতর্ক] করেছেন, কারণ এর মাধ্যমে হৃদয়ের অন্তরঙ্গতা ও ভালোবাসা প্রকাশ হয়।[3]কিতাবুশ শারহুস সুন্নাতি লিল-বাঘাবী ১৩/৬৯ https://shamela.ws/book/7891/5140
আব্দুল মোহসেন আল আবাদ (রহঃ/হাফিঃ) বলেছেন,
(لا يأكل طعامك إلا تقي) المقصود بذلك أن يدعوه، وأما أن يحسن الإنسان إلى غيره ممن هو بحاجة إلى الإحسان، فإنه يحسن إلى التقي وغير التقي، لاسيما إذا كان هذا الإحسان يؤثر في غير التقي.
(আল্লাহভীরু মুত্তাকী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়) এর দ্বারা যা বোঝায় তা হল তাকে আমন্ত্রণ জানানো, এবং একজন ব্যক্তি যদি অন্যদের দান-খয়রাতের প্রয়োজন হয়, তবে সেটা ধার্মিক ও অধার্মিকদের [উভয়ের] জন্যই ভাল। বিশেষ করে যদি এই দানশীলতা অবিশ্বাসীদেরকে প্রভাবিত করে।[4]কিতাবুশ শারহুস সুনানে আবু দাঊদ লিল-‘আবাদ, পর্ব ৫৪৮ পৃ ৬৩ https://shamela.ws/book/37052/16622
খলিল আহমদ আল-সাহারানফৌরি (রহঃ/হাফিঃ) বলেছেন,
(ولا يأكل طعامك إلا تقي). الطعام على نوعين: إما أن يكون طعام مودة وإخاء، أو حاجة، فإذا كان طعام المودة والإخاء فينبغي أن يؤاكله مؤمنا، وأما طعام الحاجة فهو عام، فإنه سبحانه وتعالى قال: {ويطعمون الطعام على حبه مسكينا ويتيما وأسيرا} (٢)، فإنه لا يختص بالمؤمن.
(পরহেযগার ব্যতীত তোমাদের খাবার খাবে না)। খাদ্য দুই প্রকার: হয় স্নেহ ও ভ্রাতৃত্বের খাদ্য এবং প্রয়োজনের সময় খাদ্য খাওয়ানো, সুতরাং যদি তা স্নেহ ও ভ্রাতৃত্বের খাদ্য হয়, তবে তা একজন মুমিনেরই খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনের খাদ্যের ব্যাপারটি সাধারণ (মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্যই)। কারণ আল্লাহু সুবহানাওয়া তাআলা বলেছেন, {তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। – [কুরআন, সূরা আল ইনসান ৭৬:৮] } এবং এই আয়াত শুধুমাত্র মু’মিন বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট নয়।[5]কিতাবু বাযলুল মাজহুদ ফি হালি সুনানে আবু দাঊদ ১৩/২৫৪ https://shamela.ws/book/14601/8281
ইবনু রাসলান (রহঃ/হাফিঃ) বলেছেন,
(একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছাড়া যেন কেউ আপনার খাবার না খায়) যাতে আপনি তাকে যা খাওয়াবেন তা তাকে ইবাদতে সাহায্য করবে এবং এখানে দুঃখী, ক্ষুধার্ত এবং মেহমানদের খাবারের কথা বলা হয় নি, বরং ‘দান, সান্ত্বনা এবং উদারতার’ খাবারের কথা বলা হয়েছে।…[6]কিতাবুশ শারহুস সুনানে আবি দাঊদ লি ইবনে রাসলান ১৮/৫২৪ https://shamela.ws/book/131521/12254#p1
ইত্যাদি ইত্যাদি…
ইসলামের মূল কথা হচ্ছে, সাধারণভাবেই [মুসলিম/অমুসলিম যেই হোক] অভাবী ও প্রতিবেশীকে খাবার-অন্যান্য জিনিস দিয়ে তাদের হক্ব আদায় করতে হবে। আর সাধারণভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুধু পরহেজগার লোকদের সাথেই খাওয়াদাওয়া করতে হবে – তাদের সাথেই উঠাবসা করতে হবে।
অন্যদিকে যারা প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে তাদের ধর্মের কী অবস্থা সেটা তো জানেনই! নিচুজাতের সাথে খেলে জাত যায়। অমুক অমুকের থেকে খাবার খাওয়া যাবে না। অমুককে খাবার দেওয়া যাবে না। ইত্যাদি!
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হিদায়াত দিন।
Footnotes
⇧1 | সুনানে আবু দাঊদ ৪৮৩২; রিয়াদুস সালেহীন ৩৭০; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৫৫৪, ৫৫৫, ৫৬০, ৫২৫; মিশকাত ৫০১৮; সহীহুল জামে’ ৭৩৪১; তিরমিজি ২৩৯৫; আলবানী (রহঃ) এবং বাঘাবী (রহঃ) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। |
---|---|
⇧2 | আল আদাবুল মুফরাদ ১২৭, সহিহ মাউকুফ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=45442 |
⇧3 | কিতাবুশ শারহুস সুন্নাতি লিল-বাঘাবী ১৩/৬৯ https://shamela.ws/book/7891/5140 |
⇧4 | কিতাবুশ শারহুস সুনানে আবু দাঊদ লিল-‘আবাদ, পর্ব ৫৪৮ পৃ ৬৩ https://shamela.ws/book/37052/16622 |
⇧5 | কিতাবু বাযলুল মাজহুদ ফি হালি সুনানে আবু দাঊদ ১৩/২৫৪ https://shamela.ws/book/14601/8281 |
⇧6 | কিতাবুশ শারহুস সুনানে আবি দাঊদ লি ইবনে রাসলান ১৮/৫২৪ https://shamela.ws/book/131521/12254#p1 |
অমুসলিমদের দাওয়াত করে খাওয়ানো গুনাহ। খাওয়ালে মেহমানদারী করলে, ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখলে কি সমস্যা? একটা কমিউনিটি তৈরী হয় তো
মেহমানদারি / প্রতিবেশীর হক্ব আলাদা জিনিস। আল্লাহর শত্রুদের সাথে কমিউনিটি তৈরি নিষিদ্ধ।
ধন্যবাদ।
মুতাজিলা মানে কি? আর আশারি, আসারি ও মাতুরিদী এই তিন আকিদার মধ্যে প্রকৃত আকিদা কোনটা আর কোনটা ফলো করতে হবে?
মুতাজিলা একটি বিপথগামী দল যারা দলগতভাবে বিভিন্ন কুফরির ধারক, যেমনঃ কুরআন সৃষ্ট (নাউযুবিল্লাহ), নবী-রাসূলগণ কবিরা গুনাহ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। উম্মাহর বড় অংশ তাদের তাকফির করেছেন। তবে এ নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে, https://www.islamweb.net/en/fatwa/382051/are-deobandis-maturidis-and-mutazilah-muslims
—
আশ’আরি, মাতুরিদী, আছারী (সালাফী) এই তিন মাজহাবের মধ্যে আমি আছারী (সালাফী) অনুসরণ করি। আক্বীদা সম্পর্কে আরো জানতে কিছু কিতাবের তালিকাঃ
https://www.facebook.com/watch/?v=502660898122943