ইসলামইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাব

ইসলামে দাসী-স্ত্রী এবং যৌন বিশুদ্ধতা

যদিও ইসলামে প্রকৃতপক্ষে দাসী শব্দটি নেই, ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় আমরা দাস-দাসী বলতে যা সাধারণত যে চিত্র চিত্রিত করে থাকি মনের ভেতর সেটা আসলে খ্রিস্টান[1]Numbers 31/17-18; Exodus 21/7; 1 Kings 11/3 ও হিন্দুদের[2]See Here সাথে সম্পর্কিত। তো যেহেতু প্রচলিত শব্দ হলো দাসী তাই এই শব্দই ব্যবহার করছি। তো আজকে ইসলামে স্ত্রী ও দাসীর মধ্যে কয়েকটি তুলনামূলক পর্যালোচনা করতে চাই।

স্ত্রী, দাসী এবং ‘সহবাস’

আমরা সাধারণত যেটাকে বিবাহ বলে থাকি ইসলামী পরিভাষায় সেটাকে নিকাহ (نكاح), বা তাযবীজ (تزويج) বলা হয়ে থাকে। যার আভিধানিক অর্থ হল: মিলন (union), জোড়া সৃষ্টি করা (pairing)। নিকাহের প্রধানতম ও প্রাইমারি উদ্দেশ্যই যৌনমিলন। যৌনতা মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। এটি পূরণও হতেই হবে, আবার একই সাথে একে নিয়ন্ত্রণও করতে হবে। এই চাহিদা পূরণ ও একইসাথে নিয়ন্ত্রণের বিধিবদ্ধতা হচ্ছে নিকাহ, যার উদ্দেশ্যই দুই লিঙ্গের union-কে বৈধ করা।

নিকাহর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যৌনসহবাস। কিন্তু ইসলামে দাস-চুক্তির উদ্দেশ্য সেটা নয়।

দাসী হচ্ছে দুই প্রকারঃ সাধারণ পরিচারিকা ও সুররিয়্যাহ (উপপত্নী)। ইসলামে দাসীদের সাথেও যৌনসহবাস হালাল করা হয়েছে স্ত্রীদের মতো। সেক্ষেত্রে দাসী পরিচারিকা থেকে সুররিয়্যাহ হয়ে যাবে।[3]কুরআন ২৩:৫-৭, ৪:২৪, ৩৩:৫০, ৭০:৩০

বিখ্যাত আলেম আবু-ওয়ালিদ আল-বাজি আল-মালিকী (মৃঃ ৪৭৪ হিজরি) লিখেছেন,

لأن مقصود النكاح الوطء وليس مقصود الملك الوطء

বিবাহের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই যৌনসহবাস [হালাল করা], কিন্তু দাসীর অধিকার লাভের উদ্দেশ্য তা নয়।[4]আল-মুনতাহা শারহ আল-মুয়াত্তা ৪/৮২, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, মিশর, ১৩৩২ হিজরি https://shamela.ws/book/6684/1116

ফুক্বাহায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন,

কোনো লোক যদি তার ডান হাত যার মালিক হয়েছে (কুরআনে দাসী বোঝাতে এই উপমা দেওয়া হয়েছে) তার সাথে সহবাস করে, তাহলে তাদের মধ্যেকার অধিকার বিবাহ চুক্তির মতো হয়ে যাবে। মাহরাম, গায়রে মাহরাম ইত্যাদি বিধিও প্রযোজ্য হবে।[5]শারহুল মিনহাজ ওয়া হাশিয়াতুল কালিউবি ৩/২৪৩, আল-মাউসূ’আহ আল-ফীক্বইয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ ১১/২৯৯-৩০০ https://shamela.ws/book/11430/6875#p1

‘বিবাহ’ এবং ‘মালিকানা লাভ’

হাদিসে এসেছে,

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ বিবাহের আগে তালাক নাই এবং মালিকানা লাভের আগে দাসমুক্তি নাই।[6]ইবনু মাজাহ ২০৪৮, আলবানীঃ হাসান সহিহ http://ihadis.com/19013

অর্থাৎ, স্ত্রী হালাল হয় বিবাহ চুক্তির মাধ্যমে আর দক্ষিণহস্ত হালাল হয় মালিকানা লাভের চুক্তির মাধ্যমে। এটা হলো দুইটি চুক্তির পথের পার্থক্য। সমতুল্য কথা এখান থেকেও বোঝা যায়,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জোরপূর্বক আদায়কৃত তালাক ও দাসমুক্তি কার্যকর হবে না।[7]ইবনু মাজাহ ২০৪৬, তাহক্বীক আলবানীঃ হাসান http://ihadis.com/19009

হালাল সহবাস এবং সাওয়াবের কাজ

আমরা এবার অন্য আরেকটি হাদিস দেখতে পারিঃ

…নেককাজের নির্দেশ দেয়া, খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্। নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্।…[8]মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৫৮৮, মিশকাত ১৮৯৮ … See Full Note

এখানেও স্ত্রী ও দাসীর সাথে সহবাস দুটিই সদকা। দাসী উপপত্নী হয়ে গেলে স্ত্রীর মতোই সহবাস পাওয়ার অধিকার লাভ করে সেই সুররিয়্যাহ (উপপত্নী)।

দায়িত্ব ও ভরণপোষণ

দায়িত্বের ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রেঃ

স্ত্রী দাসী
তোমরা যা খাবে তাদেরকেও (স্ত্রীদের) তা খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না।[9]সুনানে আবু দাঊদ ২১৪৪ http://ihadis.com/14107 …তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদের খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তা-ই পরতে দাও।…[10]সুনানে আবু দাঊদ ৫১৬১ http://ihadis.com/18239

False Claim: যৌনদাসী

কিছু কিছু অসৎ ব্যক্তি ‘ইসলামে যৌনদাসী, ইসলামে যৌনদাসী’ বলে মাঠে ঘাটে চিৎকার করে থাকে। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। এনসাইক্লোপিডিয়ায় উল্লেখ আছে,

Sex slavery, condition in which one human being is owned by another and is forced or otherwise coerced into working in the sex trade. Activities associated with sex slavery include prostitution, pornography, child sex rings, sex tourism, and such occupations as nude dancing and modeling. Sex trafficking is the procurement and transport of the victims.[11]Britannica, The Editors of Encyclopaedia. “sex slavery”. Encyclopedia Britannica, 10 Aug. 2022, https://www.britannica.com/topic/sex-slavery. Accessed 17 November 2022.

যৌন দাসত্ব, এমন অবস্থা যেখানে একজন মানুষ অন্যের মালিকানাধীন এবং যৌন ব্যবসায় কাজ করতে বাধ্য বা অন্যথায় বাধ্য করা হয়। যৌন দাসত্বের সাথে যুক্ত কার্যকলাপগুলির মধ্যে রয়েছে পতিতাবৃত্তি , পর্নোগ্রাফি , চাইল্ড সেক্স রিং , সেক্স ট্যুরিজম এবং নগ্ন নাচ এবং মডেলিং এর মতো পেশা৷ যৌন পাচার হচ্ছে ভিক্টিম সংগ্রহ ও পরিবহন।

এটা কি ইসলামে আছে? যৌনদাসত্বের জন্য রিসেন্ট উদাহরণ টানা যেতে পারে সেক্যুলার ও মুক্তমনা ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা ইডেন কলেজের যৌন ব্যবসা।[12]যেমনঃ https://www.kalerkantho.com/online/national/2022/10/03/1189718 অথবা, ব্রাহ্মণদের দ্বারা হাজার বছর ধরে চলে আসা দেবদাসী প্রথার কথা টানা যেতে পারে।[13]See Here আর এদিকে ইসলামে দাসী যদি শুধুমাত্র যৌনকর্মের জন্যই থাকবে তাহলে কেন আপনি তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবেন, তাও আপনার সমপর্যায়ের। আবার ওদিকে তো দাসীকে দিয়ে যৌন ব্যবসাও করানো বন্ধ করে দিয়েছে ইসলাম।

…তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদের কামনায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না।…[14]কুর’আন ২৪:৩৩

হালাল হওয়ার আগে সহবাস মানে ব্যভিচার

বিবাহের আগে স্ত্রীর (হবু) সাথে সঙ্গম যেমন ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত, তেমনই মালিকানা লাভের (ক্রয়সূত্রে হলে ক্রয়ের আগে, যুদ্ধসূত্র হলে কেন্দ্রীয়ভাবে বণ্টনের আগে) আগে দাসীর (যদিও হয় নি এখনো) সাথে সঙ্গম ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণস্বরূপ হাদিস থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি,

ধিরার বিন আল আজওয়ার ভুলক্রমে বণ্টনের আগেই একজন বন্দীনীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হোন।
তারপর অনুতপ্ত হয়ে খালিদ (সেসময় প্রধান সেনাপতি) কে বলেন উমার (রাঃ) কে এবিষয়ে চিঠি লিখতে। উমার (রাঃ) ফিরতি চিঠিতে তাকে রজমের মাধ্যমে হত্যা করতে বলেন।
উল্লেখ্য, এই চিঠি পৌঁছানোর আগেই ধিরার মৃত্যুবরণ করেছিলেন। [15]সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সুনানুল কুবরা আল বায়হাক্বী ৯/১৭৭, হাদিস নং ১৮২২২ https://shamela.ws/book/7861/20727 [এই হাদিসে একজন মাকবুল রাবী রয়েছেন, তাই শাহীদ না পাওয়া … See Full Note


কারা কারা স্ত্রী হিসেবে নিষিদ্ধ সেরকম কারা কারা দাসী হিসেবে নিষিদ্ধ সেরকম নিয়মও আছে।

পিতার বিয়ে করা কেউ যেমন পুত্রের জন্য হারাম, তেমনই পিতা যদি তাঁর কোনো অধিনস্থের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে ফেলে তাহলে সেই দাসী পুত্রের জন্য হারাম।

বংশগতি ও যৌন বিশুদ্ধতা

ইসলাম বংশগতির ধারা বিশুদ্ধ রাখার জন্য সর্বোচ্চ নিয়ম করে রেখেছে।

যেমন নিজে বাবার পরিচয় দিয়ে বাচ্চা দত্তক নেওয়া নিষিদ্ধ[16]কুর’আন ৩৩:৪-৫, লালন পালন করলেও তার বাবার জায়গায় আপনার নাম বসাতে পারবেন না, সে তার বাবার নামেই পরিচিত হবে।[17]মিশকাত ৩৩১৫ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=68642

বিবাহের ছ’মাসের আগেই সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিলে সেই সন্তান সেই স্বামীর সাথে যুক্ত করা হবে না।[18]https://www.islamweb.net/en/fatwa/390649/gave-birth-less-than-six-months-after-marriage

ঋতুবতী ও অন্যের গর্ভবতীর সাথে সহবাস হারাম

অন্যের গর্ভবতীর সাথে (আগের স্বামীর তালাক্বের পর/মারা যাওয়ার পর নতুন বিয়ে করলে) সঙ্গম নিষিদ্ধ। ঋতুবস্থায়ও নিষিদ্ধ। একই আইন প্রযুক্ত হবে দাসীর ক্ষেত্রেওঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক যুদ্ধে আসন্ন প্রসবা এক নারীকে দেখতে পেয়ে বললেনঃ সম্ভবতঃ এর মালিক এর সাথে সহবাস করেছে। লোকেরা বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমি ইচ্ছা করেছিলাম সহবাসকারীকে এমন অভিসম্পাত করি যেন সে অভিশপ্ত অবস্থায় কবরে প্রবেশ করে। সে কিভাবে ঐ সন্তানটিকে তার উত্তরাধিকারী বানাবে যেটি তার জন্য হালাল নয়? আর সে কিভাবে এ সন্তানকে গোলাম বানাবে? অথচ তা তার জন্য বৈধ নয়।[19]সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59524[20]সহিহুল মুসলিম ইফাবা ৩৪৩১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=13042

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না।[21]সুনানে আবু দাউদ ২১৫৭ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59525

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন করা। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলার সাথে সঙ্গম করা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে তার জন্য বৈধ নয় কোনো বন্দী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে পবিত্র হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যও বৈধ নয় বন্টনের পূর্বে গনীমাত বিক্রয় করা।[22]সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৮ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59526

তো ভাই ইসলামের নিয়মে দাসী যদি শুধুই ‘যৌনদাসী’ হতো তাহলে এরকম নিয়ম কেন আসবে?

ইদ্দত

আমরা জানি স্বামী তালাক্ব দিলে স্ত্রীকে ৩ মাসিক পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হয়। যদি সন্তান হওয়ার থাকে তাহলে এই সময়ের মধ্যেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
ঠিক তেমনই যুদ্ধবন্দিনীদের ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম।

হানাফী ফিকহশাস্ত্র অনুসারে,

When the army takes a woman captive followed by her husband who is also taken captive sooner or later and either the woman does not have menses during that period or has had upto three menses but she is not taken out of the Territory of War before her husband is taken, their marriage shall continue. Whosoever of the two is taken captive and brought to the Territory of Islam before the other, their marriage shall cease to exist.

কোনো স্ত্রীলোক ও তার স্বামীকে যদি একসাথে(কিংবা স্বামীকে আগে) বন্দী করা হয় ও মুসলিম এলাকাতে আনা হয় তাহলে সেই দুজনের বিবাহ অটুট থাকবে, আর সেই স্ত্রীলোকের সাথে অন্যকেউ সেসময় সঙ্গমের অধিকার লাভ করবে না।
স্বামী ছাড়া শুধু স্ত্রীলোকটিকে বন্দী করলে যতক্ষণ সেই যুদ্ধের এলাকায় থাকবে ততক্ষণ তাদের বিবাহ অটুট থাকবে, সেই এলাকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তিন মাসিক অপেক্ষা করতে হবে, তারপরেই তাকে রাষ্ট্র বণ্টন করতে পারবে। সেই স্ত্রীলোক সেই যুদ্ধের জায়গায় থাকলে, এর মধ্যেই তার স্বামী বন্দি হয়ে গেলে তাদের বিবাহ অটুট থাকবে।[23]ইমাম আবু হানিফার ছাত্র, মুঃ বিন আল হাসান আল শায়বানির লেখা থেকে নেয়া। দেখুনঃ Kitab Al-Siyar Al-Saghir – The Shorter Book on Muslim International Law, Translated by Mahmood Ahmad Ghazi, Islamic Research Institute, Islamabad, 1998 p.51 … See Full Note

হাদিস থেকে,

…যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দাতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্য বৈধ।[24]সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৫ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59523

এরপরেও একদল বুদ্ধিজীবী দাসীকে ‘যৌনদাসী’ বলে আখ্যায়িত করবে। আসলে এদের মাথায় গোমূত্র এবং ইসলামফোবিয়া ছাড়া কিছু নেই!

এক নারী এবং একইসাথে একাধিক পুরুষের সহবাস নিষিদ্ধ

বিশুদ্ধতা রক্ষায় আরেকটি নিয়ম, ইসলামে কোনো নারী একইসাথে (তিন মাসিক সময়ের মধ্যে) একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে পারে না।

সেরকম ছিলো জাহেলী যুগের তিনটি বিয়ের দুটি যেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। জাহেলিয়্যাতের যুগে এমন বিয়েও হতো যেখানে এক নারী একাধিক পুরুষের সাথে একইসাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতো।[25]সহিহুল বুখারী, ইফাবা, ৪৭৫১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=5057

সেই অনুসারেই একাধিক মালিকানার দাসীর সাথে কেউই সঙ্গম করতে পারে না।

ইবনে ক্বুদামা আল-মাকদাসি (মৃ ৬২০) লিখেছেন,

কোনো একাধিক মালিকানাধীন দাসীর সাথে সঙ্গম জায়েজ নয়।[26]Al-Mughni, Matkaba al-Qahirah, Cairo, 1968, vol.6 p.64

মইনুল হক্ক্ব উল্লেখ করেছেন,

যখন কোনো দাসী একাধিক মালিকের সাথে যুক্ত হয়, তখন তাদের কেউই সঙ্গম করতে পারবে না।[27]Kitab al-Tabaqat al-Kabir vol.2 p.78 n.2 এ থাকা অনুবাদক স. মইনুল হক্বের দিয়ে রাখা ফুটনোট

ইসলামওয়েবের ফতোয়াতেও এমনটাই উল্লেখ করা আছে।[28]https://web.archive.org/web/20130514035028/http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=6186

দাসীতো শুধু যৌনকাজের জন্যই তাই না? শুধু শুধু কেন দাসীর সাথে যৌনতাকে স্বামী স্ত্রীর মতো নিয়মে বেধে ফেলা হচ্ছে?

দুই বোনকে একইসাথে বিয়ে হারাম

আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন,

দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)।[29]কুরআন ৪:২৩

এই আইন একই সাথে বিবাহের ও মালিকানা লাভের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দুই বোনকে একসাথে স্ত্রী (বিবাহ) হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন না, একইসাথে উপপত্নী (বাঁদী থেকে) হিসাবেও গ্রহণ করতে পারবেন না।[30]ইসলামওয়ে ফতোয়া নং ৬১৯৯৭ https://ar.islamway.net/fatwa/61997/%D8%AA%D8%AD%D8%B1%D9%8A%D9%85-%D9%88%D8%B7%D8%A1-%D8%A7%D9%84%D8%AC%D8%A7%D8%B1%D9%8A%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%B4%D8%AA%D8%B1%D9%83%D8%A9

উম্মে ওয়ালাদ

দাসী যদি মনিবের সন্তান প্রসব করে তাহলে মনিবের মৃত্যুর সাথে সাথে সেই দাসী স্বাধীন হয়ে যায়। আর মনিব তাকে বিক্রিও করতে পারে না। এ সম্পর্কে পড়ুনঃ

Read More…
উম্মে ওয়ালাদ কী? উম্মে ওয়ালাদ বিক্রয় কি বৈধ?

দাসীকে বিবাহ দেওয়া ও বিবাহ করার তাগাদা

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।[31]কুরআন ২৪:৩২

হাদিসে আছে,

…যে লোকের সুন্দরী বাদী ছিল, সে তাকে উত্তম আচরণ ও আদব-কায়দা শিখিয়েছে এবং তাকে পরবর্তীতে মুক্ত করে বিয়ে করেছে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য। তার সাওয়াবও দ্বিগুণ করা হবে।…[32]তিরমিজি ১১১৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=39980

আরো দেখতে পারেন [33]Mufti Muhammad Shafi’, Ma’ariful Qur’an- Translation by Muhammad Ishrat Husain, Karachi, n.d. vol.6 pp.423-424

দাসীকে প্রহার করাও নিষিদ্ধ

আবূ ‘উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)- এর কাছে আগমন করলাম, ইতোমধ্যে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতুল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফ্ফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া।[34]সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১৯০ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=51273

দাসীর সাথে মনিবের সঙ্গমের অনুমতি কেন?

আল্লাহ আলিম। তিনি শ্রেষ্ঠ বিচারক। তিনি কেন কোনো কাজ করবেন সেটা আমরা জানি না, শুধু ধারণাই করতে পারি।

ফুক্বাহায়ে কেরামের মতে অধিনস্থ দাসীর সাথে সঙ্গমের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাব্য কারণঃ

  • সীর সতীত্ব রক্ষা, যাতে তারা ব্যভিচারে না জড়ায়।
  • মনিবেরও বিশুদ্ধতা/সতীত্ব রক্ষা।
  • মনিবের সন্তানের জন্ম দিয়ে যাতে উম্মে ওয়ালাদ আইনের মাধ্যমে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। ইত্যাদি।[35]আল-মাওসু’আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ ১১/২৯৭ https://shamela.ws/book/11430/6869#p1

তবে চাইলে দাসীর সাথে সঙ্গম থেকে বিরত থেক শুধুমাত্র পরিচারিকা হিসেবেও রাখা যায়, যেটা পূর্বে উল্লেখ করেছি আমরা।

অন্যের কাছে বিবাহিত নিজের দাসীর সাথেও সঙ্গম হারাম

দাসী অন্য কারো সাথে বিবাহিত থাকলে/বিয়ে দিয়ে দিলে তার সাথে সঙ্গম হারাম।

হাদিস থেকে পাই,

ابن ابی شیبہ
کتاب: سزاؤں کا بیان
باب: اس آدمی کے بیان میں جو اپنی باندی سے وطی کرلے درآنحالیکہ اس کا خاوند ہو
حدیث نمبر: 29152

(۲۹۱۵۲) حَدَّثَنَا عِیسَی بْنُ یُونُسَ ، عَنِ ابْنِ أَبِی عَرُوبَۃَ ، عَنْ قَتَادَۃَ ، عَنْ رَجَائٍ ، عَنْ قَبِیصَۃَ بْنِ ذُؤَیْبٍ ؛ أَنَّ رَجُلاً وَقَعَ عَلَی جَارِیَتِہِ وَلَہَا زَوْجٌ ، فَضَرَبَہُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ مِئَۃً نَکَالاً۔

এক লোক তার দাসীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় যে কিনা আরেকজনের সাথে বিবাহিত ছিলো। তখন উমর (রাঃ) সেই লোকটিকে ১০০ বেতের শাস্তি দেন।[36]মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ, ২৯১৫২,২৯১৫৩ [সহিহ https://shamela.ws/book/333/34933]

এগুলোই বোঝায় ইসলামে দাসীর অবস্থান কী, ইসলামে দাসী বলতে কী বোঝায়!
কোনো পথভ্রষ্টের যদি আসলেই ‘যৌনদাসী’ জিনিস কী তা জানতে ইচ্ছে করে তাহলে খুঁজে দেখবেন, সেক্স স্লেইভ কাকে বলে। কারো যদি নিতান্তই মানসিক বিরূপ গঠনজনিত কারণে ‘যৌনদাসী’ বলতে খুব ইচ্ছে হয় সে যেন ‘যৌনস্বামী’ ও ‘যৌনস্ত্রী’ এই দু’টি শব্দের ব্যবহারে অভ্যাস করে নেয়।

আল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? কুর’আন ৯৫:৮

Footnotes

Footnotes
1 Numbers 31/17-18; Exodus 21/7; 1 Kings 11/3
2 See Here
3 কুরআন ২৩:৫-৭, ৪:২৪, ৩৩:৫০, ৭০:৩০
4 আল-মুনতাহা শারহ আল-মুয়াত্তা ৪/৮২, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, মিশর, ১৩৩২ হিজরি https://shamela.ws/book/6684/1116
5 শারহুল মিনহাজ ওয়া হাশিয়াতুল কালিউবি ৩/২৪৩, আল-মাউসূ’আহ আল-ফীক্বইয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ ১১/২৯৯-৩০০ https://shamela.ws/book/11430/6875#p1
6 ইবনু মাজাহ ২০৪৮, আলবানীঃ হাসান সহিহ http://ihadis.com/19013
7 ইবনু মাজাহ ২০৪৬, তাহক্বীক আলবানীঃ হাসান http://ihadis.com/19009
8 মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৫৮৮, মিশকাত ১৮৯৮ http://ihadis.com/books/mishkatul-masabih/hadis/1898
9 সুনানে আবু দাঊদ ২১৪৪ http://ihadis.com/14107
10 সুনানে আবু দাঊদ ৫১৬১ http://ihadis.com/18239
11 Britannica, The Editors of Encyclopaedia. “sex slavery”. Encyclopedia Britannica, 10 Aug. 2022, https://www.britannica.com/topic/sex-slavery. Accessed 17 November 2022.
12 যেমনঃ https://www.kalerkantho.com/online/national/2022/10/03/1189718
13 See Here
14 কুর’আন ২৪:৩৩
15 সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সুনানুল কুবরা আল বায়হাক্বী ৯/১৭৭, হাদিস নং ১৮২২২ https://shamela.ws/book/7861/20727 [এই হাদিসে একজন মাকবুল রাবী রয়েছেন, তাই শাহীদ না পাওয়া পর্যন্ত একে সহিহ বলা যাচ্ছে না]
16 কুর’আন ৩৩:৪-৫
17 মিশকাত ৩৩১৫ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=68642
18 https://www.islamweb.net/en/fatwa/390649/gave-birth-less-than-six-months-after-marriage
19 সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59524
20 সহিহুল মুসলিম ইফাবা ৩৪৩১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=13042
21 সুনানে আবু দাউদ ২১৫৭ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59525
22 সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৮ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59526
23 ইমাম আবু হানিফার ছাত্র, মুঃ বিন আল হাসান আল শায়বানির লেখা থেকে নেয়া।

দেখুনঃ Kitab Al-Siyar Al-Saghir – The Shorter Book on Muslim International Law, Translated by Mahmood Ahmad Ghazi, Islamic Research Institute, Islamabad, 1998 p.51 https://www.kalamullah.com/Books/Kitab%20al-Siyar%20as-Saghir.pdf

24 সুনানে আবু দাঊদ ২১৫৫ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=59523
25 সহিহুল বুখারী, ইফাবা, ৪৭৫১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=5057
26 Al-Mughni, Matkaba al-Qahirah, Cairo, 1968, vol.6 p.64
27 Kitab al-Tabaqat al-Kabir vol.2 p.78 n.2 এ থাকা অনুবাদক স. মইনুল হক্বের দিয়ে রাখা ফুটনোট
28 https://web.archive.org/web/20130514035028/http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=6186
29 কুরআন ৪:২৩
30 ইসলামওয়ে ফতোয়া নং ৬১৯৯৭ https://ar.islamway.net/fatwa/61997/%D8%AA%D8%AD%D8%B1%D9%8A%D9%85-%D9%88%D8%B7%D8%A1-%D8%A7%D9%84%D8%AC%D8%A7%D8%B1%D9%8A%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%B4%D8%AA%D8%B1%D9%83%D8%A9
31 কুরআন ২৪:৩২
32 তিরমিজি ১১১৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=39980
33 Mufti Muhammad Shafi’, Ma’ariful Qur’an- Translation by Muhammad Ishrat Husain, Karachi, n.d. vol.6 pp.423-424
34 সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১৯০ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=51273
35 আল-মাওসু’আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ ১১/২৯৭ https://shamela.ws/book/11430/6869#p1
36 মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ, ২৯১৫২,২৯১৫৩ [সহিহ https://shamela.ws/book/333/34933]
Source
Islam on StackexchangeIslamcompass

Tahsin Arafat

Editor-in-Chief, FromMuslims
4 4 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Back to top button
FromMuslims We would like to show you notifications for the latest updates.
Dismiss
Allow Notifications